|| মাহমুদুল হাকিম তানভীর ||
একটু নিরবতার কাছে নত হও, হে মানুষ,
একটু স্থিরতার কাছে আত্মসমর্পণ করো।
দুচোখ বুজে নিজের ভেতরে তাকাও,
নিজেকে দেখো
একবার দেখো, দশবার দেখো, শতবার-
দেখো হাজারবার।
তোমাদের নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হয় নি কি মহাপ্রাণবান অনড় পৃথিবী!
তোমাদের বুনো হিংস্রতায় বিধ্বস্ত হয় নি কি মায়ের মতো আত্মজার টুকটুকে মুখ! প্রিয় স্বদেশ আমার।
চোখ মেলে দেখছি কেউ না কেউ প্রতিদিন ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিজের উপরেই।
মানুষ হয়ে মানুষে আঘাত কি আত্মহিংস্রতা নয়?
অবশ হয়ে জানছি কোন না কোন ফুল প্রতিদিন ঝরে পড়ছে আমাদের অলক্ষ্যেই!
অথচ ফুলটি আমার মা হতে পারতো,
আমার চোখের পাতায় ঝরে পড়া বৃষ্টির জল হতে পারতো,
ঘুরে ঘুরে নেচে ওঠা জলের ফোয়ারার মতো অতল প্রেম হতে পারতো।
বাঁশবনের পাশে যার বাড়ি সেই জানে
বাতাসে সরসর করে বেজে ওঠা পাতাদের শব্দ ছাড়া কতটা দীর্ঘ হয় রাত !
সমুদ্রপাড়ের মানুষই জানে
রাতের তৃতীয় প্রহরে কতটা ভালবেসে স্রোতের ডাকে সে চলে যেতে পারে জলের কাছাকাছি;
নৌকার মাঝিই জানে
বৈঠার ঘাই কতটা বুকে বাজলে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকা যায়,
আমি অমল অতীতের মতো সেই স্বদেশ চাই
যেখানে পাতারা জানে পাতাদের বুকে সশব্দ নেচে ওঠার মানে,
ফসলী জমি চেনে শরীর জুড়ে হাওয়ার কলরোলের অব্যক্ত স্বরের গল্প!
অতএব, নিরবতাই অব্যর্থ নিশানা এখন,
আত্মসমর্পণ করো, স্থিরতার বৃত্তে সপে দাও নিজেকে!
দুচোখ বুজে বুদ হও নিজের ভেতর, নিজেকে দেখো, নিঃশ্বাসে নাও বাঁচবার সবটুকু আলোড়ন।
ভুলো না, ধনুককে টেনে না ধরলে তা দ্বিগুণ গতিতে বিদ্ধ করেনা গন্তব্য।
যতই দুঃস্বপ্নের মতো সময় ঘিরে থাক,
লড়াইটা হোক মনে মন মিলিয়ে-বিশ্বাসে বিশ্বাস;
বর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য হোক বর্মের সুরক্ষা,
আমাদের মিলিত শক্তি ফিরিয়ে দিক উদ্ধত তরবারির মতো জীবানুর নখর।
ঘরে ঘরে রচিত হোক উন্মুখ পৃথিবীর জন্য বীজ বোনা!
ঘরে ঘরে যুথবদ্ধতায় নামুক মুক্ত বাতাসে একটু নিশ্বাসের আশ্বাস!
ঘরে ঘরে রুদ্ধতা মেনে আসুক মহাপৃথিবীর শান্তি অবারিত!
পরের পৃথিবীটা হোক মানুষ ও প্রকৃতির যৌথ খামার।
পরের পৃথিবীটা হোক মানুষ ও প্রকৃতির মিলিত হবার।
পরের পৃথিবীটা হোক তোমার- আমার- সবার।