আম্পান বিপর্যস্ত বানিয়াশান্তার যৌনকর্মীদের পাশে সংযোগ পরিবার

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

“অন্ধকারে থাকার জন্য তো আমাদের জন্ম হইনি, যতবার চেয়েছি আলো নিয়ে বাঁচতে, ততবার আমাদের এই অন্ধকুঠুরিতে রেখেছে অন্য মানুষেরা, যারা আমাদের কেবল ‘ভোগপণ্য ভাবে’!”

“আমার পিচ্চিটা মেয়েটাকে গানের স্কুলে ভর্তি করাতে চাই, আমি জানি সেটা হবে না কোনদিন।”

“আমার ছেলেটা কাগজের নৌকা বানিয়ে যখন পশুর নদীতে ভাসিয়ে দেয়, আমি ভাবি ও একদিন অনেক বড় নাবিক হবে।”

“আমি অনেক সুন্দর কাঁথা বানাতাম, শীতল পাটি বুনতাম।”

বঞ্চনা আর সংক্ষোভ মেশানো এসব স্বপ্নকাব্য খুলনার বানিয়াশান্তা যৌণপল্লীর ছোট ছোট অন্ধকার কুঠরিতে।

করোনা আর আম্পানদূর্যোগে বানিয়াশান্তার এসব অন্ধকার কুঠুরিগুলো যেনো আরো গভীর অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে। চরম অর্থসংকট ওদের ফেলেছে ভয়াবহ খাদ্যসংকটে। বিপর্যস্ত এই বিশেষ পেশার মানুষগুলোর মুখে সামান্য খাবার পৌঁছে দিতে এগিয়ে গেছে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন “সংযোগ”।

কানেক্টিং পিপল, খুলনা অঞ্চলের ‘শ্রমিক-ছাত্র-জনতা ঐক্য’, বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি এ্যাকশন এগেইনস্ট কোভিড-১৯ (বিকন), অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল, বুয়েট এলামনাই ইউকে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সায়েন্সের এলামনাই, টিম গিরগিটি ও বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ধ্রুপদি ৯৪ এর সম্মিলিত প্রয়াস “সংযোগ পরিবার”।

বানিয়াশান্তার বিশেষ পেশার নারীদের ১০০ পরিবারের জন্য এক মাসের খাদ্যসহায়তা পৌঁছা দেয়া হয়েছে ‘শ্রমিক-ছাত্র-জনতা ঐক্য’ –এর স্থানীয় ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে। পরিবার প্রতি ২৫ কেজি চাল, ১০ কেজি আটা, ৩ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি মসুর ডাল, ৫ কেজি আলু, ৩ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি লবণ ও ১ পিস সাবানের একটি প্যাকেজের সঙ্গে নগদ ১৭৫০ টাকার সহায়তা দিয়েছে সংযোগ পরিবার।

এই উদ্যোগে কোহিনূর কেমিক্যাল দিয়েছে ১০০ পিস বল সাবান, জনৈক একজন দিয়েছেন ১০০ প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন। শিশুদের কথা চিন্তা করে আরলা বাংলাদেশ ফুডস লিমিটেড দিয়েছে ১০০ প্যাকেট পাউডার মিল্ক। ১০০ কেজি লবনের ব্যবস্থা করেন সংযোগ পরিবারের আরেক সদস্য। দেশ বিদেশের অনেকেই বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেন এই উদ্যোগে ।

করোনার এই দূর্যোগে ধারাবাহিক সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সংযোগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আহমেদ জামাল বলেন, “করোনায় নানাভাবে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেক উদ্যোগ আর অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের সংযোগ পরিবার। বানিয়াশান্তার যৌণকর্মীদের পাশে যারা সহায়তা নিয়ে, শ্রম দিয়ে, সহযোগিতা দিয়ে উদ্যোগটি সফল করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

সংযোগের মাধ্যমে গত তিন মাসে দেশের ১০০টির মত হাসপাতালে প্রায় ৪ হাজার মেডিকেল গাউন, ১০ হাজার মাস্ক ও ২ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। ডাক্তারদের পাশাপাশি সাধারন মানুষের জন্য মাস্ক ও সেনিটাইজার পৌছে দেয়ার কাজটিও করছে সংগঠনটি। এছাড়া বেদে থেকে শুরু করে মৃৎশিল্পী, পাটকলের শ্রমিক, স্কুল ও মাদ্রাসার ননএমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের কাছে নগদ অর্থ ও খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে সংযোগ, কানেক্টিং পিপল পরিবার।

অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী শায়েস্তাগীর চৌধুরী জানান, বিশ্বব‌্যা‌পী ছ‌ড়ি‌য়ে পড়া ক‌রোনায় কর্মহীন মানুষদের পাশে নানা ভাবে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি। অংকুর একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন । আমরা এই বিপদে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার অনুদান বাংলাদেশে পাঠাচ্ছি, যার মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গের ৫০০০ পরিবারে ফুড রেশন, উপজেলা পর্যায়ে ১০,০০০ পিপিই বিতরণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি। আমরা বিশ্বাস করি সবাই মিলে এগিয়ে এলেই এই বিপদে মানুষকে বাঁচানো যাবে।

বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি একশন এগেইন্স্ট কোভিট-১৯ (বিকন) শুরু থেকেই সারাদেশে সকল বিভাগে ৬০টিরও বেশি স্থানে ফুড রেশনিং এবং ৩২টির ও বেশি হাসপাতালে পিপিই বিতরণ কার্যক্রম চালিয়েছে। বিকন মূলত বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষদের কাছে পৌঁছাতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা দেশব্যাপী তরুণ ভলান্টিয়ার গ্রুপগুলোর সাথে কাজ করে চলেছে। তারা দেশব্যাপী এমন সব জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছেছে যারা সর্বাঙ্গীণ বিচারেই প্রান্তিক।

বিকন-এর প্রতিষ্ঠাতা আশফাক কবির বলেন, এই দূর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতেই বিকনের পথচলা। লকডাউনে যেসব পেশার মানুষ কষ্টে আছে, আমরা তাদেরকে গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছি। এই যূথবদ্ধ লড়া চলমান থাকবে।

সংবাদ সারাবেলা/ নাআ/সেখা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন