এটি মাত্র ২৩ বছর বয়সে বিশ্বজয়ের গল্প!

একদিন মোমের পাখনায় চড়ে সূর্যকে ছুঁতে গিয়েছিল যে তারুণ্য, তারই উত্তরপুরুষ ব্যারিংটন আরভিং। পৃথিবীর কনিষ্ঠতম নভোচারী; প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ, যে ঝড়, তুষারপাত আর মৌসুমি বায়ুর প্রবল প্রকোপকে উপেক্ষা করে, একা প্রদক্ষিণ করেছেন গোটা পৃথিবীকে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে, টাকা-পয়সা ছাড়াই তার এই বিশ্বজয়ের গল্প।


ব্যারিংটন আরভিং। আমেরিকার ফ্লোরিডা মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ বিদ্যার ২৩ বছরের শিক্ষার্থী। মহাকাশ বিদ্যায় পড়াশোনার সময় তার মগজে ঢুকে যায় পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করার স্বপ্ন। আর অমনি স্বপ্নের পেছনে ছোটা।


প্লেন ভাড়া চাইলেন বিভিন্ন জনের কাছে। কিন্তু আস্ত একটা প্লেন মিলবে কোথায়। কিন্তু তারণ্যের এ সাহস ও সম্ভাবনাকে শ্রদ্ধা করলেন অনেকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে এলো আকাশযান তৈরির অজ¯্র পার্টস। প্রায় ৩ লাখ ডলারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্টস অনুদান হিসেবে পান তিনি। এরপর আরভিংকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে কলোম্বিয়া এয়ারক্রাফ্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি আরভিনের হয়ে সব পার্টস একত্রে করে একেবারে বিনামূল্যে তৈরি করেন এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট ‘কলাম্বিয়া ৪০০’ নামের প্লেন। চারপাশের হাজারো মানুষের সহায়তায় তৈরি হওয়া এ প্লেনটির নাম রাখা হয় ‘ইনসপাইরেশন’। বাংলায় যেটা দাঁড়ায় অনুপ্রেরণা।


২০০৭ সালের মার্চ মাসের ২৩ তারিখে মায়ামির অপালোক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেন আরভিং। ভয়াবহ তুষারপাত, ঝড়, মৌসুমি বায়ুর প্রবল বেগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাকে দমাতে পারেনি। প্রায় ২৭টি দেশ আর ৪টি মহাদেশের উপর দিয়ে একদম একা গোটা পৃথিবী ভ্রমণ ২৩ বছর বয়সী কোনো তরুণের জন্য এটাই প্রথম। প্রায় দু-মাস ভ্রমণের এ সময়ে তরুণ আরভিংকে গোটা আটলান্টিকও পার করেন একা, যেটাও কোনো নভোচারীর জন্য রেকর্ড। জুনের ২৭ তারিখ আরভিংয়ের স্বপ্নযান ফের স্পর্শ করে ভ‚মি। বিমানবন্দরে নেমে আপ্লুত আর আবেগাক্রান্ত হয়ে ওঠেন আরভিং। টেলিভিশনকে জানান, আমি একজন জ্যামাইকান হিসেবে ভীষণ গর্বিত, আর খুশি আমার স্বপ্নটাকে পূরণ করতে পেরেছি এই ভেবে। আমার সহপাঠী ও বন্ধুরা আমাকে অনেক কথাই বলেছিল। আমার বয়স কম। কাজটা যেহেতু টাকা ও সাহস নিয়ে, সেহেতু কাজটা করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আর অভিজ্ঞতা ও মহাকাশ ভ্রমণের জ্ঞান না থাকায় আমি আর ফিরে আসতে পারব না। কিন্তু আমি পেরেছি। ‘ইনসপাইরেশন’-এ চড়ে আমার এ বিশ্বভ্রমণ তরুণদের সাহস জোগাবে। মনের জোর আর আত্মবিশ্বাস থাকলে যে কোনো কিছু করা সম্ভব তরুণদের পক্ষে, আমার এ অভিযাত্রা সেটারই সাক্ষ্য বহন করে। এর আগে জার্মানির ৩৪ বছর বয়স্ক এক ভদ্রলোক ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ গোটা পৃথিবী একাই প্রদক্ষিণ করেন। এর আগে ১১ বছর বয়স্ক এক শিশু আকাশযানে করে ভ‚-গোলক প্রদক্ষিণ করেন, তবে সেটা ছিল বাবার সঙ্গে। ক্যাপটেন আরভিং জন্ম গ্রহণ করেন জামাইকার এক ছোট্ট শহরে। এরপর বাবা-মায়ের সঙ্গে একদম ছেলেবেলায় চলে আসেন মার্কিন মুলুকে।


এরপর আরভিং তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কাজে ফিরে যান আবার। কেননা এখন জীবনের অনেক পথ হাঁটা বাকি। অনেক কিছুই এখনও শেখার আছে সামনের দিনগুলোর জন্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন