|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
আম্পানের সপ্তাহ না পেরোতেই আবারো ঝড়ের শঙ্কা জানালো আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে সতর্কতা হিসেবে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা এ কে নাজমুল হক জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য চলছে। এরই প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সতর্কতা হিসেবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, বায়ুচাপের আধিক্য ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং আশপাশের দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে মঙ্গলবারের জলবায়ু পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী চব্বিশ ঘন্টা অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়, ঢাকা বিভাগের দুয়েক জায়গায় এবং বগুড়া অঞ্চলে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে ।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান গত ২০ মে দুপুরের পর সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে। সে সময় এ ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে ছিল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস।
পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালিয়ে আম্পান ওই রাতেই পুরোপুরি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পরদিন পরিণত হয় স্থল নিম্নচাপে।
এ দুর্যোগের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে অন্তত ২৩ জনের প্রাণ যায়। প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক। উপকূলের বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু মানুষ। যে ক্ষতি এখনো সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি মানুষ। এরইমধ্যে আবারও ঝড়ে শঙ্কা তাদেরকে বেসামাল করে তুলেছে।
সমুদ্রউপকূলে সতর্ক সংকেত কোনটার ঝুঁকিমাত্রা কত
আবহাওয়া খারাপ কিংবা পরিস্থিতির অবনতি হলে সময় সময় তা পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন সতর্কতা দিয়ে মানুষকে সাবধান করে আবহাওয়া অফিস। তবে এই সতর্কতা দুই ধরনের নৌ এবং সামুদ্রিক সতর্ক সংকেত।
দেশের ভেতরে ঝড় বিশেষ করে কালবৈশাখীর জন্য এবং কখনো কখনো সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে নৌ সতর্কতা সংকেতগুলো দেওয়া হয়ে থাকে। আর সামুদ্রিক কোনো ঝড় বা ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা থাকলে দেওয়া হয় সামুদ্রিক সতর্কতা সংকেত।
এই সংকেত এক থেকে শুরু করে ঝড়ের সম্ভাব্য তীব্রতা নিরুপণ করে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সংকেতগুলো সংরক্ষণ ও জারি করে। তবে নৌ সতর্কতা সংকেত হয় চারটি। আর সামুদ্রিক সতর্ক সংকেত হয় ১১টি।
১১টি সামুদ্রিক সংকেত
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত:
এই সংকেতের অর্থ হচ্ছে আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করছেন।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত:
এ পূর্বাভাসে অর্থ হচ্ছে, বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি বা তার বেশি হতে পারে।
নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে, এ সংকেতে এমনটি বোঝানো হয়। এ সময় ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি বা এর বেশি হওয়ার শঙ্কা থাকে। আর প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে বলে বোঝানো হয়।
আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত:
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ার উপক্রম হলে এ সংকেত দেওয়া হয়। তখন ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি বা এর বেশি। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
সাত নম্বর বিপদ সংকেত:
এই সংকেতে বোঝানো হয়, বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কি.মি। ঝড়টি বন্দরের উপর বা এর কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ছয় নম্বর বিপদ সংকেত:
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ার শঙ্কা দেখা দিলে এই সংকেত দেওয়া হয়। তখন ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিমি। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত:
এতে বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে বলে বোঝানো হয়। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কি.মি। ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত:
এই সংকেতের অর্থ হলো ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কি.মি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি।
তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত:
বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলোর দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকলে দেওয়া হয় এই সংকেত। এতে বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৫০ কি.মি হতে পারে।
দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত:
দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হলে এই সংকেত দেওয়া হয়। ঝড়ে বাতাসের একটানা গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কি.মি। এতে বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না। তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়তে পারে।
এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত:
এই সতর্কতা দিয়ে বোঝানো হয় জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার (কি.মি.)। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হবে।
চারটি নৌ সতর্কতা সংকেত-
চার নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত:
এই সংকেতের অর্থ হলো, বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং বন্দর এলাকায় সহসাই আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার তদুর্ধ। এ সময় সব ধরনের নৌ-যানকে নিরাপদ আশ্রয় থাকতে হবে।
তিন নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত:
বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কি.মি পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড়, যা সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। এ সময় সব ধরনের নৌ-যানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত:
বন্দর এলাকায় নিম্নচাপের সমতুল্য তীব্রতার একটি ঝড় বা একটি কালবৈশাখী ঝড়। যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনুর্ধ্ব ৬১ কিলোমিটার। নৌ-যান এদের কোনোটির কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌ-যানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
এক নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত:
এতে বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে নিপতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় ৬০ কি.মি. গতিবেগের কালবৈশাখী ক্ষেত্রেও এই সংকেত প্রদর্শিত হয়। এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।