|| চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ||
চট্টগ্রামের হালদা নদীতে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো একটি মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে। ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং আনুমানিক ৭০-৮০ কেজি ওজনের এই ডলফিন জেলেদের জালে আটকা পড়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছে।
রোববার ২৪ মে সকালে হালদা নদীর রাউজান অংশের উরকিরচর এলাকায় মৃত ডলফিনটিকে নদীর তীরে দেখে স্থানীয়রা প্রশাসনকে জানান বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন।
তিনি বলেন, মৃত ডলফিনের বিষয়টি সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। মদুনাঘাট হ্যাচারির উল্টো পাশে রাউজান অংশের উরকিরচর এলাকায় পাওয়া গেছে সেটি।
‘ডলফিনটি ভাসতে ভাসতে নদীরে তীরে এসে আটকে ছিল। স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আমরা রাউজান উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঘটনাস্থলে রাউজানের ইউএনও গিয়েছেন, এব্যাপার তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত ডলফিনটির মুৃখে মাছ ধরার জালের টুকরো ছিল। স্থানীয়দের ধারণা জালে আটকা পড়ে ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে।
গত ৮ মে সর্বশেষ ডলফিনটি হত্যার পর এবারই প্রথম হালদা নদীতে ডলফিন হত্যা বন্ধে কার্যকর নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়েছিল হাইকোর্টে। করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালতে এটি ছিল প্রথম রিট। ওই রিটের ভিত্তিতে ১৯ মে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য, কার্পজাতীয় মা-মাছ ও ডলফিন রক্ষায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এ কমিটির নাম হবে ‘হালদা নদীর ডলফিন হত্যা রোধ, প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীববৈচিত্র এবং সকল প্রকার মা-মাছ রক্ষা কমিটি’। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪ সদস্যের এ কমিটিকে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ২৮ মে ভার্চুয়াল এ আদালতের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যত ডলফিন মৃত অবস্থায় হালদা নদীতে ভেসে উঠেছিল প্রত্যেকবার ধারণা করা হয়েছিল নদীতে চলাচল করা বালুবাহী নৌযান বা ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রপেলারের (পানির নিচে থাকা ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত পাখা) আঘাতে ডলফিনগুলোর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ২৩ ও ২৫তম ডলফিন জালে আটকা এবং ২৪তম হত্যার শিকার ডলফিনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করার আলামত ছিল স্পষ্ট।
এদিকে, সারা বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে হালদায় ছিল ১৭০টি ডলফিন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২৫টি ডলফিন মারা গেছে। হালদায় যে ডলফিন দেখা যায় তা স্থানীয়ভাবে উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত। মিঠাপানির স্তন্যপায়ী এই প্রাণী গেঞ্জেস বা গাঙ্গেয় ডলফিন। সাধারণত দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে এটি বিচরণ করে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হালদা নদীতে পরিচালিত ইউএনডিপির সহযোগিতায় গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি ও বনবিভাগের পরিচালিত এক জরিপে হালদায় মাত্র ৪৫টি ডলফিনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। হালদা নদীর মোহনা থেকে সাত্তার ঘাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকাকে ডলফিনের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনায়েদ কবীর সোহাগের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
সসা/এমএম/এসএম