|| এম. মতিন, চট্টগ্রাম ||
চট্টগ্রামের হালদা নদীতে শুক্রবার পর্যন্ত দুই দিনে ২৫ হাজার ৫শ’ ৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছে জেলেরা। এই পরিমান গেল ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে করোনার কারণে পোনা বিক্রি নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে জেলেদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, বৃহস্পতিবার ২১শে মে রাত ১২টার দিকে জোয়ারের সময় মা-মাছের কিছু নিষিক্ত ডিম পাওয়া গেলেও শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পুরোদমে ডিম ছাড়ে মা মাছ। দিনশেষে প্রায় ২৫ হাজার ৫শ ৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা গেছে। এসবের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাইশের ডিমই বেশী।
মৎস্য অধিদপ্তর, হালদা রিভার রিচার্স সেন্টার ও হালদায় প্রকল্প কাজে নিয়োজিত এনজিও সংস্থা আইডিএফসহ তিনটি দফতরের কর্মকর্তারা নিষিক্ত ডিমের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমিন।
সূত্র আরও জানায়, প্রতি বছর হালদা নদীতে মা মাছ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে অমাবশ্যা-পূর্ণিমা তিথির একটি বিশেষ মুহূর্তে ও পরিবেশে ডিম ছাড়ে। আর ডিম ছাড়ার এই বিশেষ সময়কে জো বলা হয়। গত তিন দিন ধরে দমকা, ঝড়ো হাত্তয়া, বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। এই কারণে মা মাছ প্রথমে নমুনা ডিম ছাড়ে। পরে পরিস্থিতি অনুকূল হত্তয়ায় মধ্যরাতে হালদা নদীর বিভিন্ন জায়গায় ডিম ছাড়ে মা মাছ।
এদিকে দেশে আবহাওয়া কিছুটা বৈরী হলেও হালদা নদীর আবহাওয়া পরিবেশ অনুকূলে থাকায় মা মাছের দেয়া নিষিক্ত ডিম সংগ্রহে বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞ ও পারদর্শী প্রায় সাড়ে ৬শ ডিমসংগ্রহকারী ছিলেন প্রস্তুত। ডিম ধরার মশারি জাল, বালতিসহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে হালদার নদীর বুকে ২৮০টি নৌকায় ডিম সংগ্রহ করেন জেলেরা।
হাটহাজারী উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা কাজী আবুল কালাম বলেন, ‘জেলেরা গেল দশ বছরে এতো ডিম বেশি সংগ্রহ করেনি। কিন্তু করোনার কারনে এসব পোনা বাজার পর্যন্ত পৌঁছানোটাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
হালদা নদী দূষণ বন্ধ, মা মাছ রক্ষা ও ড্রেজার চলাচল বন্ধ রাখায় গত ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ডিম পাত্তয়া গেছে বলে জানান হালদা রিসার্চ এন্ড ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সংগ্রহ করা ডিম থেকে দিনে প্রায় ৩৭৮ কেজি রেণু উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’
দেশের একমাত্র মিঠাপানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়জুড়ে বয়ে গেছে। এটি বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়।
সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পূর্ণিমায় প্রবল বর্ষণ আর মেঘের গর্জনের পর পাহাড়ি ঢল নামলে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ স্মরণাতীত কাল থেকে ডিম ছেড়ে আসছে। নদীর গড়দুয়ারা, নয়াহাট, মাছুয়াঘোনা, মারঘাট, নাপিতেরহাট সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ডিম সংগ্রহ করা হয়।