সৌদি আরবে করোনায় মৃত বাংলাদেশি ৬৪ জন মৃতদেহ পাঠাবে না কর্তৃপক্ষ

|| সাগর চৌধুরী, সৌদি আরব থেকে ||

সৌদি আরবে প্রায় চার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছে মারা গেছেন ৬৪ জন, এদের মধ্যে শুধু চট্রগ্রাম অঞ্চলেরই ২২ জন । আনুপাতিক হারে দেশটিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীর এই সংখ্যা অন্য অনেক দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি । এদিকে চলমান অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিমান চলাচল বন্ধ, স্থানীয় অফিস আদালত বন্ধ, সর্বোপরি হিমাগার ও মর্গে জায়গা না হওয়াসহ নানা কারণে মৃত প্রবাসীর দেহ বাংলাদেশে পাঠানোর কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ ৫ই মে’র তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩০ হাজার ২ শত ৫১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৪ শত ৩১ জন। আর মারা গেছেন প্রবাসী ও সৌদি নাগরিকসহ মোট ২শ’ জন। এরমধ্যে পবিত্র শহর হিসেবে খ্যাত মক্কায় সবচেয়ে বেশি ৮৫ জন মারা গেছেন। এরপরই রয়েছে আরেক পবিত্র শহর মদিনা।

গেল ৫ই মে’র পরিসংখ্যান মত আক্রান্তের মধ্যে শতকরা ৯২ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক, ৬ ভাগ শিশু এবং ২ ভাগ ষাটোর্ধ্ব । আবার, এদের মধ্যে ৮৬ ভাগ পুরুষ, ১৪ ভাগ নারী এবং ৭৬ ভাগ প্রবাসী ও ২৪ ভগ সৌদি নাগরিক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. মুহাম্মদ আব্দুল আলী বলেছেন, করোনাভাইরাসের আক্রমন থেকে সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে । কেউ একদিনে সুস্থ হয়েছেন কেউবা এক সপ্তাহ আবার কারো ক্ষেত্রে অবস্থা জটিল হওয়ায় আরও বেশি সময় লাগছে । তবে, আশার কথা হচ্ছে সুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে । পবিত্র নগরী মক্কায় আক্রান্ত, সুস্থ এবং মৃতের সংখ্যা বেশি। সৌদি আরবে করোনাক্রান্তে মৃত্যুর শতকরা হার এখন পর্যন্ত ০ দশমিক ৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‌‘সাবধান হওয়ার এখনই সময়! অযৌক্তিক কাজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ানো এবং অন্যদের সাথে মিশে যাওয়া কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পেছনের মূল কারন। আপনার সুরক্ষার জন্য, ঘরে থাকুন।’

মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর সম্ভাবনা নেই
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে উড়ছে না বিমান, স্থানীয় অফিস আদালতও বন্ধ, সর্বোপরি হিমাগার ও মর্গে জায়গা না হওয়াসহ নানা কারণে প্রবাসীর মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর সম্ভাবনা নেই । এ ক্ষেত্রে সৌদি কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে দাফনের অনুমতির জন্য । দেশটির নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের মর্গে একটি মৃতদেহ সর্ব্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত রাখা যায় । এই সময়ের মধ্যে কোন সুরাহা না হলে দাফনের বিধান রয়েছে। বেওয়ারিশ মতদেহের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।

বাংলাদেশ মিশন সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন কারনে বাংলাদেশি প্রবাসীর মৃতদেহ দীর্ঘদিন ধরে হিমাগারে পড়ে আছে । এমনিতেই প্রত্যেক হাসপাতালে হিমাগারের সংখ্যা সীমিত। বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় প্রবাসীর মৃতদেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না । তাই, হিমাগার হয়েছে পরিপূর্ণ । নতুন করে কোন মৃতদেহ রাখার জায়গা থাকছেনা । বাধ্য হয়েই দাফন করতে হবে পুরনো মৃতদেহ । জায়গা করে দিতে হবে নতুনগুলোর জন্য।

শুধু রিয়াদের সিমুশি হাসপাতালের হিমঘরেই বাংলাদেশী ৩৫টি মৃতদেহ রয়েছে। এমনিভাবে রিয়াদসহ দেশটির অন্য শহরের বড় বড় সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে আনুমানিক দুইশ’র বেশী মৃতদেহ পড়ে আছে । স্বাভাবিক মৃত, হৃদরোগে মৃত, সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত এবং হালের করোনায় মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

জুবাইল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা পরিস্থিতির কারনে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি এলাকার পুলিশ, ট্রাফিক, হাসপাতাল এবং গভর্ণর অফিসের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে যারা ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে পুরোনো যে কোন লাশ দাফন করতে পারবে।

একটি সুত্র জানায়, দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর দাম্মাম, আহসা, জুবাইল, ও ক্বাতিফে রয়েছে ৯টি মৃতদেহ। যাদের পরিবার সিদ্ধান্ত না দেয়ায় হয়ত শিগগিরই সেগুলো বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে ফেলবে কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত মৃতের পরিবার দাফনের অনুমতি না দিলে দুতাবাস এনওসি ( অনাপত্তিপত্র) ইস্যু করে না । আর এনওসি ইস্যু না হলে মৃত্যুসনদসহ অন্যন্য কাগজ পত্র ইস্যু হয় না। এনওসি ও অন্যন্য কাগজ পত্র ঢাকায় কল্যাণ বোর্ডে জমা দিতে না পারলে; এককালীন সাহায্য ৩ লাখ টাকা পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া যায় না।

আর এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে রিয়াদে বাংলাদেশ দুতাবাস: 00966570212180 (রিয়াদ অঞ্চলে মৃতের বিষয়ে) জেদ্দা কনস্যূলেট: 00966533147912 (জেদ্দা অঞ্চলে মৃতের বিষয়ে) ফোন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিতে স্থানীয়ভাবে দাফনের সরকারি অনুমতিপত্রের একটি নমুনা যুক্ত করা হল । এছাড়াও দুতাবাস বরাবর আবেদন আকারেও মতামত পাঠানো যাবে, শুধু নির্ভরযোগ্য সত্যায়ন থাকতে হবে বলে জানিয়েছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন