|| সারাবেলা ডেস্ক ||
অনশন ভেঙেছেন ইব্রাহিম গোকসেক। দীর্ঘ ৩২৩দিনের মাথায় অনশণ ভাঙার পর যারপর নাই অসুস্থ ইব্রাহিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তুরস্কের কর্তৃত্ববাদি ‘ইসলামি’ সরকারের জনবিরুদ্ধ শাসনের প্রতিবাদে আমৃত্যু অনশনের পণ করেছিলেন গ্রুপ ইয়োরামের এই সদস্য। তুরস্কের কথিত ইসলামপন্থী সরকার দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় অনশন ভাঙেন ইব্রাহিম।
তুরস্কে ১৯৮০ সালের সামরিক অভূত্থান ও তৎপরবর্তি সামরিক নীতিশাসনের বিরুদ্ধে দেশটির অন্যসব সোচ্চারণের স্রোতে গড়ে ওঠে ব্যান্ড দল গ্রুপ ইয়োরাম। সেটা ছিল ১৯৮৫ সাল। শুরু থেকেই জনগণের পক্ষে বাম ঘরাণার গানের দল হিসেবে দ্রুত তুরস্কের সাধারন মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায় গ্রুপ ইয়োরাম। প্রধাণত রাজনৈতিক গান গাইয়ে দল হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে গ্রুপ ইয়োরামের সদস্যদের।

রাজনৈতিক গান আর শাসকগোষ্ঠির মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানুষের যৌক্তিক স্বাধীনতার দাবিতে তাদের সোচ্চারণকে ভালভাবে নেয়নি তুরস্কের সেনাসরকার। নানাভাবে ‘সন্ত্রাসি গ্রুপ’ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনতে থাকে সরকারি কর্তৃপক্ষ।
সেই ৮৫ সাল থেকে আজকের ২০২০। মাঝে দীঘ ৩৫ বছর। সেনাশাসন থেকে ‘ইসলামি গনতান্ত্রিক’ শাসন। পাল্টেছে অনেক কিছু। তবে সবথেকে বেশী পাল্টেছে সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার ধরন। দেশটিতে সবশেষ রেসেপ তাইপ এরদোগানের নেতৃত্বাধীন কথিত ইসলামপন্থী দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির শাসনে আরো সংকুচিত হয়েছে মানুষের মানবাধিকার ও গনতন্ত্র। বেড়েছে বিরুদ্ধ মত দমন।
এমন পরিস্থিতিতে অন্য অনেক বিরুদ্ধ মত দমনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষের এই গানের দলটির ওপর। নিষিদ্ধ করা হয় তাদের কনসার্টসহ অন্যান্য কার্যক্রম। আর এর প্রতিবাদসহ দলের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সরকারি অভিযান বন্ধ, সন্ত্রাসি তালিকা থেকে সংগঠন ও এর সদস্যদের নাম বাদ দেওয়া এবং কারাবন্দি সকল সদস্যকে মুক্তির দাবিতে আমরণ অনশনের পথ বেছে নেন গ্রুপ ইয়োরামের সদস্যরা। এই প্রতিবাদের পথে গেল ৩রা এপ্রিল অনশণরত অবস্থায় ২৮৮ দিনের মাথায় মারা যান গ্রুপ ইয়োরামের সদস্য হেলিন বোলেক।



হেলিনের প্রতিবাদের পথ ধরে এবারে সফল হয়েছে ইব্রাহিমের অনশণ প্রতিবাদ। তুর্কি সরকারের সঙ্গে গ্রুপ ইয়োরামের সফল আলোচনার পর অনশণ ভেঙ্গেছেন ইব্রাহিম। রাষ্ট্র রাজী হয়েছেন কনসার্টের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে।
রাষ্ট্রসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর গ্রুপের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের চলমান প্রতিরোধ অনশণ রাজনৈতিক বিজয় পেয়েছে। আমরা সারাবিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছি, গ্রুপ ইয়োরামের সদস্য হিসেবে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচনার গতিপথ এখনো আমাদের পক্ষেই রয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামীটাও আমাদের হবে। এখন আমরা আমাদের বন্ধুরা ইস্তাম্বুল কর্তৃপক্ষের কাছে কনসার্ট আয়োজনের আবেদন করবো।



গ্রুপ ইয়োরাম ১৯৮৫ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে সারাদেশে মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে গান রচনা ও কনসার্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে আসছিল। এ পর্যন্ত তাদের এলবাম সংখ্যা ২৩টি। তুরস্কের রাষ্ট্রিয় পর্যায়ের জনবিরুদ্ধতা নিয়ে একটি ছবিও তৈরি করেছে গ্রুপ ইয়োরাম।
এসব কারণে ২০১৬ সালে তুর্কি সরকার সংগঠনটির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করে। অভিযোগ করা হয় গ্রুপ ইয়োরাম দেশটির রেভ্যূলোশনারি পিপলস লিবারেশন পার্টি ডিএইচকেপি-সি’র সঙ্গে সম্পর্কিত। মার্কস ও লেনিনবাদী এই দলটিকে শুধু তুরস্কেই নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নও সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষনা করেছে।
হেলিন বোলেক ও ইব্রাহিম গোকসেককে ১০১৯ সালের গোড়ার দিকে গ্রেফতার করেছিল রেসেপ তাইপ এরদোগানের সরকার। কারাগারে থাকতেই এই দুইজন অনশন শুরু করেন। গত বছরের শেষদিকে হেলিন বোলেক ছাড়া পান এবং অনশন চালিয়ে যান। অবশেষে ২৮৮ দিনের মাথায় মারা যান বোলেক। স্বাস্থ্যগত কারণে গোকসেককে মুক্তি দেওয়া হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এই দুইজনকেই অনশনরত অবস্থাতেই ফের গ্রেফতার করা হয় গেল ১১ই মার্চ। এবং উমরানিয়ে ট্রেইনিং এন্ড রিসার্চ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয় ১৬ই মার্চ।