প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি …

|| বিপ্লব শাহনেওয়াজ ||

‘…. খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে, তোমার গফুর মহেষ এখন কোথায় কেমন আছে…”
প্রিয় আপা! সবাই আপনাকে প্রশংসার তুষ্টিতে ভুলিয়ে রাখতে চায়। আমি একটু অন্য ভাবে সরাসরি বলবো।
PPE ডিসপোজেবল। তারপর PPE সঠিক ভাবে পরা এবং খোলার সময় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। উপসর্গ ছাড়া বা তথ্য গোপন করা রোগীদের কাছ থেকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। উন্নত বিশ্বেও এত সুরক্ষার পরেও ১০% স্বাস্হ্য কর্মী আক্রান্ত হচ্ছে। ইতালিতে কয়েক শত ডাক্তার ও নার্স মারা গেছে। ইউকে, ইউএসএতেও মারা যাচ্ছে। ধনী দেশ সুইডেনেও পিপিই র ঘাটতি। বাংলাদেশের মতো রোগীর চাপ থাকলে সমস্যা এখানেও হতো। তারপরও পরিকল্পনা আছে।

দেশে ইতোমধ্যে, মহামারীর এই প্রাথমিক অবস্থায় একটু বেশী সংখ্যক ডাক্তার এবং নার্স আক্রান্ত, যা ভয়ঙ্কর পূর্ভাবাস দিচ্ছে। আপা, রাগ করে আবেগ বসত জোর করে এবং আমদানি করে স্বাস্হ্যসেবা নিশ্চিত করা যায় না। আমি আগেও একবার বলেছি – অন্য রোগে জরুরী চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যাওয়া একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু দায় শুধু ডাক্তার বা নার্সদের নয়। স্বাস্হ্যব্যবস্থা যারা নিয়ন্ত্রন করেন তাদেরও। কয়েকটা আবজাল তৈরী বন্ধ হলে বাংলাদেশের সব ডাক্তার ডিসপোজেবেল পিপিই পরতো। পর্দা আর বালিশ কিনতে না হলে – সাধারন সময়েও প্রয়োজনীয় পিপিই থাকতো। রিজার্ভের টাকা পাচার না হলে – বাংলাদেশের সব স্বাস্হ্যকর্মীদের ড্রেসকোড অনুসারে ইউনিফর্ম থাকতো। স্বাস্হ্য ব্যবস্থা ডিজিটাল হতো।

সুসময়ে ক্যাসিনো সম্রাট, জিকে তৈরী হবে। পাপিয়ার জলসা হবে। দুর্যোগে কম্বল চোর (১৯৭৪) আর চাল চোর (২০২০) তৈরী হবে। আর দু:সময়ে আমরা জয়বাংলা শ্লোগান দিবো – বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইবো। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে ছাত্রজীবন উৎসর্গ করবো- তা হতে পারে না। আমাদের মতো কর্মীদেরও আবেগ আছে। অধিকার আছে। বিপদে আপনার পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক দায়িত্ব আছে।

আজ আবার দুর্যোগ। রাষ্ট্রীয় এবং বৈশ্বিক দুর্যোগ। এরজন্যই আবার আপনার পাশে দাঁড়াতে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের সমালোচনা উন্মুক্তভাবে করি কারন – আমার দলে নূন্যতম হলেও গনতান্ত্রিক ধারা রয়েছে। এর জন্য গর্ববোধ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শরীরে যে রক্ত বইছে – আমার শরীরেও চেতনার সেই রক্ত বইছে। সেই অধিকারেই আমি বলছি। সেই সাহসে আমি উচ্চারন করছি। দু:সাহস নয় আপা! আপনার কথায় বঙ্গবন্ধুর স্বাস্হ্যকর সোনার বাংলা গড়ার আপনার কর্মীরা খুবই মর্মাহত। এ সময় ঐক্য দরকার। অনুপ্রেরণা দরকার। অনুদানের জন্য স্বাস্হ্যকর্মীরা কাজ করে না। তাদের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেন – দেখবেন কি উদ্দিপনায়, জীবনের সব ঝুঁকি নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা করবে।

প্রিয় আপা। কোথায় যেন ভুল হচ্ছে। আমি জানি এবং বিশ্বাস করি আপনার জনগনের স্বাস্হ্যঅধিকার নিশ্চিত করতে আপনি – কিছু চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য এমন কঠোর এবং এমনকি স্বাস্হ্যকর্মী আমদানির কথা বলেছেন। কিন্তু আপা এই দুর্যোগের সময় দরকার ঐক্য। সমন্বয়। দোষারোপ নয়। এই মূহুর্তে অনেক জরুরী কাজ করা দরকার। এই মূহুর্তেই দরকার। লকডাউন দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। কিছু করতে হবে- বৈজ্ঞানিক অনেক পন্থা আছে। অন্যথায় দেরি হয়ে যাবে।

ভালো থাকবেন সব সময়। আপনাকে ভালো থাকতেই হবে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য- এ ব্যাপারে আমরা খুবই স্বার্থপর। স্বার্থপর ভাবেই আপনাকে চাই। সুস্থ থাকুন। দীর্ঘজীবন লাভ করুন।
বিপ্লব শাহনেওয়াজ, সুইডেন থেকে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন