করোনায় দুর্দিন শ্রীনগরের কুমোরদের

|| অনলাইন প্রতিনিধি, শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) ||

করোনায় দুর্গত দিন পার করছেন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের কুমোররা। প্রায় সাড়ে চারশ’ বছর ধরে শ্রীনগরে কুমোরদের বাস। সেই থেকেই এখনো তারা ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার বিশেষায়িত এই পেশা। উপজেলার হাঁসাড়া কুমার বাড়ির ২০ থেকে ২৫টি পরিবার এখন যারপর নাই অর্থেকেষ্টে।

করোনার আর্থিক অভিঘাতে তাদের আয়রোজগার নেই বললেই চলে। এমনিতেই মাটির তৈরী জিনিসপত্রের কদর অনেকই কম। তারপর করোনা। সবমিলিয়ে অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের। ৪২৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পীরা এখন চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

করোনা লকডাউনে সরকারের ঘোষনা মত সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। জনসমাগম এড়াতে বৈশাখীর উৎসব হয়নি। কোথায়ও বসেনি বৈশাখী মেলা। নতুন বছরের মেলা ও অনুষ্ঠানে বিক্রি হবে তাই সারাবছর ধরে তারা তৈরি করেছিল মাটির নানানো জিনিসপত্র। সবই এখন অবিক্রিত পড়ে রয়েছে। মাটির তৈরী এসব জিনিসপত্রও নষ্ট হওয়ার পথে।

পরিস্থিতির শিকার অনেক পরিবারই তাদের কাজ বন্ধ রেখেছেন। এসময় অরুন পাল, মদন পাল, বিনয় পাল, লক্ষণ পাল, সুরন্ড পালের মত অনেকেই বললেন, ‘করোনার প্রভাবে তাদের সমস্ত মালামাল আটকা পড়েছে। এসব সামগ্রী তারা কোথাও বিক্রি করতে পারছেন না। এছাড়াও চলতি বৈশাখী মেলার জন্য মাটির হরেক রকমের পন্য বিক্রি করতে পারেননি। কোথাও মেলা উৎসব না থাকায় কিছুই করতে পারছেন না তারা।

এছাড়া করোনা প্রভাবে অনেকেরই কাজ নেই। এতে খাবার সংকটেও পড়েছেন তারা। তারা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখানে মাত্র ৩-৪টি পরিবারে খাদ্যসহায়তা করা হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগেও যা দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের চেয়ে সামান্যই।

কুমোর মিঠুন পাল বলেন, পরিবার গুলো প্রায় ৪২৭ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। কয়েক পুরুষের পেশা তারা ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন। তার পরিবারের সব সদস্যই মৃৎশিল্পী। দৈনিক ৩০০-৪০০টি করে মাটির বিভিন্ন রকমের সামগ্রী তৈরী করেন তারা। কেউ অন্য কোনও কাজ করেননা। তাই ঘরে তার অনেক মালামাল জমা হয়ে গেছে। হাট বাজার বন্ধ, বৈশাখী উৎসব ও মেলা কোথাও নেই। আমরা এখন কি করবো?

দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকার আমাদের দিকে যদি একটু সুদৃষ্টি দিতেন, তাহলে এই পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনরকমে বেচে থাকা যেত! এছাড়াও উপজেলার ষোলঘর পালবাড়ি, তন্তর কুমার পাড়া ও বাঘড়ায়ও কুমার বাড়ি নামে বেশ কিছু মৃৎশিল্পী আছেন। করোনার প্রভাবে সবাই এখন কর্মহারা হয়ে পড়েছেন। করোনার প্রভাবে কর্মহীন মৃৎশিল্পীরা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন