করোনাঝুঁকিতে রাঙ্গুনিয়ায় ইটভাটার ১৬ হাজার শ্রমিক

|| অনলাইন প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ||

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারাত্মক ঝুঁকিতে সারাদেশ। বন্ধ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানা। এরইমধ্যে প্রায় ১৬ হাজার শ্রমিককে কাজ করতে হচ্ছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইটভাটাগুলোতে। এখনো বন্ধ হয়নি উপজেলার কোন ইটভাটা। পুরাদমে চলছে ইট পোড়ানো।

উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনাও মানছেন না ভাটার মালিকরা। শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। উল্টো মালিকরা বলছেন, শ্রমিকদের অনুরোধেই তারা ভাটা চালু রেখেছেন।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন ওষুধ আর নিত্যপণ্য ছাড়া সব অফিস, প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট বন্ধ রাখলেও রাঙ্গুনিয়ার প্রায় ১১০টি ইটভাটায় এখনো ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মালিকরা অনকেটা শ্রমিকদের জিম্মি করেই এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব ভাটায় কোন প্রকার সুরক্ষা ছাড়াই প্রায় ১৫-১৬ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। বেশির ভাগ ভাটায়ই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে নোয়াখালী, লক্ষীপুর থেকে আসা শ্রমিকদের কাজে নিয়োজিত করায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নের বি এন বি, বি এস বি, এ বি এম, এম বি ডাব্লিউ, এস এস বি-২, বি বি এম, বি কে বি, বি আর বি-২, ও বি বি সি-১ ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। প্রত্যোকটি ভাটার শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে ঘা ঘেঁষাঘেঁষি করেই বালি মিশ্রিত কাঁদামাটি দিয়ে ইট তৈরীর কাজ করছেন। অথচ নেই কোন করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধক মাস্ক, নেই পর্যাপ্ত সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা।

কোন ভাটাতেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারতো দূরে থাক, নূন্যতম সচেতনতা ও সতর্কতামূলক কোন ব্যবস্থা নেই। আর শ্রমিকদের থাকার ঘর গুলোর একেবারেই নাজুক অবস্থা। ছোট ছোট ঝুপড়ির ভাঙাচোরা একেকটা ঘরে একত্রে জড়ো হয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিককে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। যা তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে।

লক্ষীপুর থেকে আসা বি এন বি ইটভাটার শ্রমিক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাভাইরাস সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝি না, তবে বাড়িতে থাকার কথা শুনেছি। কিন্তু ছুটি না দিলে তো বাড়িতে যেতে পারছি না। চাকরি চলে গেলেও বিপাকে পড়বো। আর দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে চেষ্টা করি, কিন্তু পারিনা। কাজ করতে গেলে ছোঁয়াছুঁয়ি হয়েই যায়। রাতে এক ঘরে ২০ থেকে ২৫ জন গা ঘেঁষাঘেঁষি করে একসঙ্গে ঘুমোতে হয়।’

এবিএম ভাটার মাঝি সৈয়দুল হক বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি আছে জানি। কী করব ভাটার মালিক আমাদের কাজ করতে বাধ্য করেছে। আমাদের ছেড়ে দেয় না। দেশের বাড়ীতে আমাদের নিয়ে পরিবার অনেক চিন্তায় রয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামপুরের এক ভাটার মালিক বলেন, ‘ইটভাটা বন্ধে সরকার থেকে কোনো দিক-নির্দেশনা পায়নি। ভাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসন থেকেও আমাদেরকে কোন চিঠি দেয়নি বিধায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া মৌসুম শেষ, কয়দিন পরই বৃষ্টি শুরু হবে। এখনো অনেক কাঁচা ইট পোঁড়ানো বাকি রয়েছে। এই মুহূর্তে শ্রমিক ছেড়ে দিলে আমাদের বড় ক্ষতি হবে।’

রাঙ্গুনিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সেক্রেটারি কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন ইটভাটা বন্ধ করে দিলে অনেক লোকসান গুনতে হবে। এমনিতেই কয়লা সংকটের কারণে এবার ইট পোড়ানো শুরু করতে দেরি হয়েছে। এখনো প্রতিটি ভাটায় অনেক কাঁচা ইট রয়েছে। তবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করানো হচ্ছে।’

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজিব পালিত বলেন, ‘যেখানেই গ্যাদারিং বা জনসমাগম হয়, সেখানেই করোনাভাইরাস ছড়ানোর ভয় সবচে বেশি। আমরা আসলেই জানি না ভাইরাসটি কার ভেতরে আছে। আর ইটভাটায় ধূলাবালি ওড়ে বেশি এবং শ্রমিকরা দূরত্ব বজায় না রেখেই কাজ করে। তাই ইটভাটার শ্রমিকরাই সবচে বেশি করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।’

এ প্রসঙ্গে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, ‘সরাকরি নির্দেশনা মতে এখন কোনো ইটভাটা চলবে না। ইটভাটাগুলো জরুরি সেবা নয়। করোনার এই দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদি কেউ ইটভাটা চালু রাখে তাহলে প্রয়োজনে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’#

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন