করোনাদুর্গত জামালপুরের হস্তশিল্পে দ্রুত সহায়তা দাবি

|| সোলায়মান হোসেন, জামালপুর থেকে ||
করোনাদুর্যোগে বন্ধ হয়ে গেছে জামালপুরর নকশী কাঁথা শিল্প। বেকার হয়ে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখের বেশী কর্মী। বিস্তর লোকসানে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ উদ্যোক্তা। করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির ২৩দিন পার হলেও কোন প্রকার খাদ্যসহায়তা মেলেনি এসব নারী কর্মীদের। অথচ এই কদিন আগেও নকশী কাঁথা বুনে বেশ ভালই সংসার চলছিল তাদের। জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক জানিয়েছেন, হস্তশিল্পের সঙ্গে জড়িত এসব নারী কর্মীদের খাদ্যসহায়তার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
সুঁই-সুতায় নারীদের নিপুন হাতে তৈরী জামালপুরের নকশী কাঁথা, বেড কভার, থ্রিপিছ, পাঞ্জাবী, ফতুয়াসহ নানা ধরণের পোশাকপণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জায়গা করে নিয়েছে। এজন্য জেলার ব্র্যান্ডিং হিসেবে স্থান পেয়েছে এই হস্তশিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে ২০ হাজার নারী-পুরুষ উদ্যোক্তার উদ্যোগে কাজ করছেন লাখেরও বেশী গ্রামীণ নারী কর্মী। প্রতি বছরের মত বৈশাখ ও ঈদকে সামনে রেখে কোটি টাকার পণ্য তৈরি করেন এসব উদ্যোক্তারা। কিন্ত এবারে করোনাদুর্যোগে পড়ে এসব পণ্য অবিক্রিত পড়ে আছে। বিক্রি করতে না পারায় কারখানা বন্ধ করে দেয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে নারী কর্মীরা। কাজ না থাকার পাশাপাশি বকেয়া মজুরি না পেয়ে অভাব-অনটনে দিন পার করলেও এখন পর্যন্ত সরকারি খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
জামালপুর পৌরসভার হাট চন্দ্রা এলাকার নারী হস্তশিল্প কর্মী বুলবুলী বেগম বলেন, সংসার এখন কষ্টে চলতাছে। কাজ কর্ম নেই, সব বন্ধ। ওই এলাকার আরেক নারী হস্তশিল্প কর্মী রিনা বেগম জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে তারা কোনো জায়গায় যেতে পারছেন না, কাজ করতে পারছেন না। সেলাই করে তাদের সংসার চলে। এপ্রিল মাসে তাদের বেতন হবে না। এর জন্য খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করতে হবে তাদের।
একই এলাকার আরেক নারী হস্তশিল্প কর্মী স্বপ্না বেগম জানান, তারা এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি খাদ্ সহায়তা পাননি। তাদের সকল কাজ বন্ধ। তাই তারা কোনো বেতন পাবে না। সরকারের কাছ থেকে দ্রুত খাদ্যসহায়তা চাইছেন তারা।
হস্তশিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনার কারণে তাদের তৈরী পণ্য বিক্রি করতে না পারায় কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এতে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। কর্মহীন দরিদ্র নারী কর্মীদের সরকারি খাদ্য সহায়তা দেয়ার দাবি জানান তারা।
আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের হাট চন্দ্রা উপকেন্দ্রের ইনচার্জ রাজিয়া আক্তার জানান, তার কেন্দ্রে ৩৬ জন নারী হস্তশিল্পের কাজ করেন। তাদের সকলের বেতন বন্ধ। সবাই খুব কষ্টে দিন পার করছে। সরকার যদি তাদের সাহায্য না করে তাহলে সামনে খুবই বিপদের মুখে পড়বেন তার নারী কর্মীরা।
এদিকে মা মনি হস্তশিল্পের ব্যবস্থাপক মোছা. অঞ্জনা বেগম জানান, তাদের কারখানায় ৫১ জন নারী কাজ করেন। তারা খুবই দরিদ্র ও অসহায়। এই ৫১জনকে প্রতিষ্ঠানের মালিক ব্যক্তিগত ভাবে কিছু সহায়তা করেছে। কিন্তু সেই সহায়তার পরিমান খুবই কম। এখন সরকার সহায়তা না করলে না খেয়ে থাকতে হবে এই ৫১ জনের পরিবারকে।
ক্ষুদ্র হস্তুশিল্প ব্যবসায়ী আব্দুল হাই জানান, এই করোনা ভাইরাসের জন্য তার ৫ লাখ টাকার পন্য আটকে গিয়েছে। এখন সরকার যদি সহায়তা না করে তাহলে একদম পথে বসে যাবেন তিনি।
মা মনি হস্তশিল্পের প্রোপাইটর নজরুল ইসলাম জানান, এবারে ঈদকে সামনে রেখে তিনি ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার পন্য প্রস্তুত করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার সব পন্য আটকে যায়। এখন এসব পন্য বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছেন তিনি।
এদিকে পুস্প হস্তশিল্পের প্রোপাইটর মো. কাবীরুল হাসান বলেন, এখন করোনার কারনে আমার ব্যবসা প্রায় বিলুপ্তির পথে। অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। এনজিও ও ব্যাংকে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মতো ঋণ। সরকার যদি ঋনের সুদ না কমায় তাহলে পথে বসে যাবো আমি।
হস্তশিল্প কর্মীদের সহায়তার ব্যাপারে জামালপুর জেলা হস্তশিল্প ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহীনুর আলম জানান, করোনার কারণে তৈরী করা পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। সরকার যদি ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেন এবং দুই শতাংশ সুদে ঋণ দেয় তা হলেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক জানিয়েছেন, এসব নারী কর্মীদের খাদ্য সহায়তার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন