|| ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) থেকে ||
আবহমান বাংলার বুকের মাঝে ঝোপ জাল, খরা জাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য বেশ চিরচেনা। তবে সময়ের পালা বদলে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে এই জালে মাছ শিকারের দৃশ্য এখন চোখে পরে না। এই জাল স্থানীয় ভাবে কেউ বলে খরা জাল কেউ বলে ঝোপ জাল। বিশেষত গ্রামের খাল-বিলে এই জাল দিয়ে মাছ শিকারের দৃশ্য মাঝে মাঝে চোখে পরে। তবে সচরাচর নয়। বলতে গেলে এটি যেন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। খরা জাল ব্যবহারের মাধ্যমে একজন জেলে খুব সহজে মাছ স্বীকার করতে পারেন। এর থলি বেশ বড়। খালের ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে খরা জালের পরিধি কত বড় হবে। জালে সামনের অংশ খাল বা বিলের পানির গভীরতা ছুয়ে মাছ কে থলিতে বন্দী করে। তখন জেলে দু‘হাত দিয়ে জালে ঢুকে পড়া মাছগুলোকে ঝাকাতে ঝাকাতে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারেন। যার কারনে এই জাল মাছ ধরার বিশেষ ফাদ হিসাবেও বিবেচনা করা হয়।
মাছ স্বীকারের দারুন এই কৌশল মাঝে মাঝে চোখে পরে গ্রামাঞ্চলে। তবে এলাকার জলবায়ূ পরিবর্তনের সৃষ্ট নদী ভাঙ্গনের কারনে বহু খাল হারিয়ে গেছে। যার কারনে খরা জাল দিয়ে মাছ ধরার সংখ্যা দিনে দিনে কমে গেছে। খরা জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হয়। যেমন চিংরি, টেংরা, লাইটা, পুটি, বাইলা, চাপিলা, বাইম সহ নানা প্রজাতির মাছ। খালে-বিলে মাছ ধরার আরোও অন্যান্য কৌশল থাকলেও এটি একটি স্থায়ী কৌশল। খরা জাল স্থায়ীভাবে নির্মাণ করার জন্য জেলেকে কয়েক হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। জাল কেনা সেলাই করা ভ্যাসাল তৈরী করার জন্য বাশ, রশি কিনতে হয়। সাথে একটা ছোট কাটের নৌকা। তবে বর্ষাঋতুতে জেলেরা কেবল এই খরা জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারেন। সুস্ক মৌসুমে খালে পানি না থাকায় মাছ ধরা সম্ভব হয় না। খরা জালে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও কিছু কিছু জেলেরা সংসারের চাহিদা পূরনের জন্য এই জালে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায়। খালে সাধারনত জোয়ারের বাটা পরলে খরা জাল পাতেন জেলেরা। এতে কম স্রোতে নদীর দিকে ফিরে যাওয়া মাছ জেলেদের জালে আকটা পরে। তবে ছোট মাছ ছাড়াও মাঝে মাঝে ভাগ্য ভাল থাকলে বড় মাছও পাওয়া যায়।
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী গুচ্ছগ্রামে সামছুদ্দীন খরা জাল দিয়ে মাছ ধরার জেলে জানান এই জাল দিয়ে মাছ ধরা খুব সহজ। পেটের দায়ে সংসারের খরচ জোগাতে আমরা এই জাল দিয়ে মাছ ধরতে হয়। বর্ষায় কৃষি কাজ না থাকায় আমরা এই জাল দিয়ে মাছ মেরে বিক্রি করে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ জোগাই। খরা জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য ভাটার উপর নির্ভর করতে হয়। জোয়ারের স্রোত বেশি হলে মাছ ধরা সম্ভব হয় না।
তবে এই জাল মশারির নেট দিয়ে তৈরী হওয়ায় মাছের রেনু পোনাও ধরা পরে। এতে দেশি মাছের বংশবিস্তার ধ্বংস হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অরিতিক্ত দায়ীত্ব) শিমা রানী বিশ্বাস বলেন মৎস্য আইনে স্থায়ী ভাবে স্থাপনা তৈরী করার কারনে আমরা জেলেদেরকে নিষেধ করি। তারপরও গোপনে অনেকই অনেক জায়গায় খরা জাল দিয়ে মাছ আহরন করে থাকেন। সরকারী বিধি মোতাবেক জালের মেষ ফাশের আয়তন ৬ সেঃমিঃ উপরের হতে হবে। পোনা মাছ গুলো সাধারণত কম পানিতে ঝাকে ঝাকে বিচরন করে। তাই অনেক সময় এই জালে পোনা মাছ ধরা পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে সময় মাছের ডিম পারা বা মাছ উৎপাদনের সময় হয় তখন হাওর অঞ্চলে এইসব জালগুলো বন্ধ রাখা গেলে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হতো।