ডেসকো কোম্পানীর অবহেলায় কুড়িগ্রামের দিলীপ এখন পঙ্গু

|| আনোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম থেকে ||

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই পতিয়ার পাড় গ্রামের যুবক দিলীপ চন্দ্র রায়। জন্মই যেন তার অভিশাপ। জানেনা জীবনের এ প্রান্তে এসে কি করবে। কাজ করে জীবন বাঁচাতে চায় কিন্তু উপায় নেই। সাম্প্রতিক সময়ে তার হাত দুটি কেটে ফেলেছে ডাক্তার। এখন কৃত্রিম হাত লাগাতে চায়। অনেক টাকার দরকার। কিন্তু সংসারে দিন মজুর মায়ের পক্ষে তা সম্ভব নয়। ঢাকার ডেসকো কর্তৃপক্ষের বৈদ্যুতিক তারের যত্রতত্র ব্যবহারের কারণে আজ তার এই করুন অবস্থা। সে দাবী করে ডেসকো কর্তৃপক্ষ সহ সরকার যেন তার সহযোগীতায় এগিয়ে আসে।

ছোটবেলা থেকে মা দুখো রানীর সাথে মামা বিশাদুরের বাড়ীতে মানুষ হয় সে। বাবা প্রাণ কুমার তার জন্মের পর তার মাকে ছেড়ে ভারতে চলে যায়। তারপর আর কোন খোঁজ নেয়নি। মা সন্তানকে নিয়ে দিনমজুরী করে কোনোরকম জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখে। ভাবে সন্তান একদিন বড় হলে তাদের সংসারের কিছুটা অভাব কমবে। কিন্তু জীবন বাস্তবতায় তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মায়ের কষ্ট দেখে দিলীপ পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে কাজের সন্ধানে গ্রামের এক বড় ভাই এর সাথে চলে যায় ঢাকায়। বিল্ডিং এর রড মিস্ত্রির হেলপার হিসেবে কাজ করে। কয়েক মাস আগে ঢাকার উত্তরার ৩ নং সেক্টরে রোড নং ১৩ ঢাকাস্থ এ বি সি কোম্পানীর বিল্ডিং এর কাজ করছিল। বিল্ডিং এর পাশে ডেসকোর বিদ্যুৎ লাইন ছিল। দিলীপ বিল্ডিং-এর উপরে লোহার পাইপ তুলতে গিয়ে হঠাৎ করে হাত ফসকে ছিটকে পড়ে কারেন্ট এর তারের সাথে জড়িয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টায় তার প্রাণ প্রদীপ ফিরে আসে। প্রায় তিন মাস চিকিৎসা করে দিলীপ সুস্থ হলেও তার দু হাতের কবজি পর্যন্ত কেটে ফেলে ডাক্তাররা।

দিলীপ চন্দ্র বলেন, বর্তমানে সে সুস্থ হলেও তার দুটো হাতের কব্জি নেই। এ অবস্থায় বাড়ীতে বেকার জীবন কাটাচ্ছে। নতুন করে দুটো হাত লাগাতে চায়। এ জন্য কয়েক লক্ষ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু কোথায় এ টাকা পাবে জানে না সে। সে বলে ঢাকার ডেসকোর উপরের বৈদুতিক তার নেকেট থাকার কারণে লোহার পাইপ হাত পিছলে তারের উপর পড়েছিল। তার পর থেকেই আমার এই অবস্থা। ভিক্ষা করে জীবন চালাতে চায় না দিলীপ।

মা দুখো রানী বলেন, আমার কষ্ট দেখে দিলীপ রড মিস্ত্রির কাজ করতে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে দু হাত হারিয়ে এখন সে বাড়িতে কোন কিছুই করতে পারে না। সরকার যেন আমার ছেলেকে একটু দেখে সেই আশা বুকে নিয়ে বেচে আছে।

 

এলাকাবাসী বলেন, ছেলেটার খুব দু:খ, কিছু করতে ও খাইতে পারেনা। অভাবের কারণে দিলীপ ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে দুই হাত হারিয়ে সে এখন বাড়িতে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে তাকে দেখার কেউ নেই। সরকার যদি তাকে সাহায্য করে তাহলে সে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। সমাজের বিত্তবানরাসহ সরকারের কাছে এই দাবি জানান তারা।

এ ব্যাপারে দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবেদ আলী সরদার জানান, আমরা দিলীপকে কিছু সাহায্য করেছি। তবে সরকার যদি তার প্রতি একটু সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে তার কৃত্রিম হাত দুটো লাগানোর ব্যবস্থা করে। তাহলে সে নতুন জীবন ফিরে পাবে।

 

সহযোগিতা করতে চাইলে যোগাযোগ দিলীপ চন্দ্র রায়, মোবাইল-০১৩২৪-১১০৫৪৮ (বিকাশ) নম্বরে সহযোগিতা করতে পারেন।

 

সংবাদ সারাদিন