নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুডের আগুনে এ পর্যন্ত মৃত উদ্ধার ৪৯ জন

অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পরিবারপ্রতি ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ ||

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বেলা সোয়া দুইটা পর্যন্ত লাশগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (উন্নয়ন) নূর হোসেন জানান, ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পঞ্চম তলায় আগুন জ্বলছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কারখানাটির চারতলা ভবনে তল্লাশি চালিয়ে অন্তত অর্ধশত মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানাবে।

শুক্রবার বেলা ১১টা দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার ভেতরে প্লাস্টিক ও রাসায়নিক পদার্থ আছে। যে কারণে আগুন নেভানোর পর আবার জ্বলে উঠছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট কাজ করছে। কারখানার নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত তাঁরা আগুন নেভাতে পেরেছেন। কিন্তু পঞ্চম তলা ও ষষ্ঠ তলায় আগুন জ্বলছে। প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া ও আগুনের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের দ্রুত সন্ধান চেয়ে স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন। এ সময় আটটি মোটরসাইকেল ও ১৫/২০ যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ্ জানান, আগুনের কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম ব্যাপারীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিদের পরিবারপ্রতি ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

এরআগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে ভবনটি থেকে লাফিয়ে পড়েন শ্রমিক স্বপ্না রানী (৪৪) ও মিনা আক্তার (৩৪)। ঘটনাস্থলেই তাঁরা দুজন মারা যান। এরপর মোরসালিন (২৮) নামের একজন শ্রমিক প্রাণ বাঁচাতে ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে লাফ দেন। মোরসালিনকে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

সংবাদ সারাদিন