‘ওগুলো বাদ’ এবার শুধুই আনন্দ উদযাপন

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এবারের সফর হবে শুধুই আনন্দের আর উদযাপনের। তিস্তার মতো দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো এবার তুলতে চান না কোন পক্ষই।

মোদীর সফরে তিস্তা প্রসঙ্গে বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এবারের সফর হবে শুধুই আনন্দের আর উদযাপনের। তিস্তার মতো দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো এবার তুলতে চান না কোন পক্ষই। শুক্রবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন।

তিনি বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী আসছেন, এতেই আমরা অনেক খুশি। শুধু উনি না, উনার দেখাদেখি আরও চারজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আসছেন। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান আসছেন। আমরা খুবই আনন্দিত, ইট শোজ দা হাইট অব ডিপ্লোম্যাটিক ম্যাচুরিটি অ্যান্ড এচিভমেন্ট।”

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে গতবছর ১৭ই মার্চ জাতীয় পর্যায়ে বড় আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। সে আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে সব স্থগিত হয়ে যায়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ মাসের ১৭ থেকে ২৬শে মার্চ দশ দিন জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে যোগ দিতে ২৬শে মার্চ ঢাকা আসার কথা রয়েছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর। পরদিন সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দির, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ এবং কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

মোদীর এই সফরে কোনো সমঝোতা স্মারক সই হবে কি না জানতে চাওয়া সাংবাদিকদের ‘ইল এলিমেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এরা সব আমাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে, আমাদের স্বাধীনতা দিবস, সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী উদযাপনে আসছেন- এটাই তো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে কোনো কথা হবে কি না-জানতে চাওয়া একজন সাংবাদিককে মাঝপথেই থামিয়ে দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। বলেন, “ওগুলো বাদ, আমরা যেটা চাই- সেটা হচ্ছে এই যে একটি আনন্দ উৎসব, আমাদের বড় উৎসবে সবাই আসছেন, এতে আমরা আনন্দিত। আর অন্যান্য ছোটখাট জিনিস যেগুলো… ভারতের সঙ্গে তো আমাদের যে ধরনের বড় বড় সমস্যা, সব আমরা আলোচনার মাধ্যমেই দূর করেছি। আর যদি কিছু থাকে, সেগুলো আস্তে আস্তে করব। বাট দিস ইভেন্ট শুড নট বি অ্যান অকেশন ফর রিজলভিং…।”

আবদুল মোমেন বলেন, এই ইভেন্ট হচ্ছে ভেরি স্পেশাল ইভেন্ট। এটা হচ্ছে এই দেশগুলোর… বাংলাদেশের প্রতি তাদের যে শ্রদ্ধাবোধ, স্বাধীনতার প্রতি তাদের যে বিরাট আগ্রহ, বঙ্গবন্ধু, যিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য….।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান আসছেন না, তারাও বার্তা পাঠিয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বার্তা পাঠিয়েছেন।

তিনি বলেন, “বার্তাটা হল, আমাদের সুবর্ণ জয়ন্তীতে তারা আমাদের সঙ্গে আছেন এবং সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকীর যে উদযাপন এবং উনার যে ত্যাগ, সেগুলো অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন।”

এবারের সফরে নরেন্দ্র মোদীর কী কী কর্মসূচি থাকছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মহামারীর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর হবে বাংলাদেশে। আর কোথাও যাননি এই কোভিডের সময়। তিনি শুধু ঢাকায় আসতেছেন না, আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাবেন। সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ওড়াকান্দি যাবেন।”

প্রসঙ্গত, পানির বদলে ধূ বালিতে ঢাকা তিস্তা। পানি না থাকায় এর মারাত্মক ক্ষতিতে পড়েছে বাংলাদেশের উত্তরের জনপদ। আর সেখানকার মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। পানির অভাবে অনিশ্চয়তায় দেশের সবচেয়ে বড় তিস্তা সেচ প্রকল্পও। তিস্তা নদীর পানি বন্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে ১৯৮৩ সাল থেকে দরকষাকষি হয়ে আসলেও সুরাহা করা যায়নি আজও।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরসময়ে বহুল আলোচিত তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি সইয়ের কথা ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সেই চুক্তির সময় ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। চুক্তি মতো তিস্তা নদীর পানির ৪২ দশমিক ৫ শতাংশে ভারতের অধিকার এবং বাকি ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় ভেস্তে যায় সে সময়ের স্বাক্ষরিত তিস্তাচুক্তি।

এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে আবারও আশা তৈরি হয় তিস্তা চুক্তি সইয়ের। সফরে তিনি বৈঠকে বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু সেবারও বেঁকে বসেন মমতা। হয়নি তিস্তা চুক্তি। এমনকি ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঢাকা সফরে এসে মমতা বন্দোপাধ্যায় তিস্তার ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন। তাতেও কোন ফল হয়নি।

সবশেষ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তাই স্বভাবতই চলতি মাসে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়ে তিস্তা ইস্যূতে আশায় বুক বেঁধেছিলো বাংলাদেশ। তবে শুক্রবার ১২ই মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন জানালেন, নরেন্দ্র মোদীর এবারের সফরে তিস্তা নিয়ে কোন কথা হবে না। পাশাপাশি বাকি নদীগুলোর পানি কিংবাদ সীমান্ত হত্যার মতো দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যুগুলোও উঠবে না আলোচনার টেবিলে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফর হবে শুধুই বাংলাদেশর মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

এরআগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘এডুকেশন এক্সপোতে’ যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। সেখানে তিনি বলেন, বিদেশে পড়তে যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন এবং মানবপাচারের মত কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সরকার এখন অনেক কঠোর এবং সতর্ক।

সংবাদ সারাদিন