মিয়ানমারে ৭০ জন খুন বাড়ছে জান্তাসহিংসতা

সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত - রাশিয়া ও চীন। পাশাপাশি কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি সমুন্নত রাখার কথাও বলেছে দেশ দুটি।

অবরোধ আরোপের আহ্বান জাতিসংঘের

|| সারাবেলা ডেস্ক/রয়টার্স ||

মিয়ানমারে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর থেকে আজ শুক্রবার অবধি চলমান বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দমন করতে গিয়ে ৭০ জনকে খুন করা হয়েছে। তারপরও প্রতিদিনই বাড়ছে বিক্ষোভের মাত্রা। এতথ্য জানিয়েছেন মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্ত কর্মকর্তা টমাস অ্যান্ড্রু। তিনি বলেছেন, বিক্ষোভ দমনে সামরিক বাহিনীর এই ‘খুন, নির্যাতন ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড’ মানবতাবিরোধী অপরাধের সামিল। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে অ্যান্ড্রু বলেছেন, নিহতদের অর্ধেকের বেশির বয়স ২৫ বছরের কম। শুধু খুনই নয়, ক্ষমতা দখলের পর দুই হাজারের বেশি মানুষকে বেআইনিভাবে আটক করেছে জান্তা সরকার। ক্ষমতা ধরে রাখতে দিনকে দিন প্রতিবাদবিরুদ্ধ শ্বেতসন্ত্রাস বেড়েই চলেছে।  

ছবি: আল জাজিরার সৌজন্যে

গেলো ১লা ফেব্রুয়ারি দেশটির নির্বাচিত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এনএলডি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করা হয় এনএলডি প্রধান অং সান সুচিসহ দলটির শীর্ষ প্রায় সব নেতাকে।

বার্তা সংস্থাগুলোর হাতে থাকা ভিডিও চিত্রগুলো প্রমাণ দিচ্ছে যে, “মিয়ানমার নামের দেশটি খুনি ও অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা বিক্ষোভকারী, চিকিৎসাকর্মী ও পথচারীদের নির্মমভাবে মারধর করেছে। সহিংসতার এমন ভিডিওচিত্র রয়েছে, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার পরের পরিস্থিতিও উঠে এসেছে, দেখা গেছে প্রাণঘাতি গুলি বিক্ষোভকারীদের মাথায় আঘাত করেছে, এবং সেনাসদস্যরা নিহত প্রতিবাদকারীদের মৃতদেহ সরিয়ে নিচ্ছে।”

ছবি: আল জাজিরার সৌজন্যে

এসব সত্ত্বেও সহিংস বিক্ষোভ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ধৈর্য্যের পরিচয় দেয়া হচ্ছে জানিয়ে জান্তা সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব চ্যান আয়ে বলেছেন, প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এদিকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায়, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগে সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ছবি: আল জাজিরার সৌজন্যে

সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত – রাশিয়া ও চীন। পাশাপাশি কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি সমুন্নত রাখার কথাও বলেছে দেশ দুটি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেস-সদস্য টমাস অ্যান্ড্রু ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও বার্তায় এই আলোচনায় অংশ নেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশ করার অধিকারের মত মৌলিক অধিকারগুলো চর্চা করতে পারছেন না সেখানকার নাগরিকেরা।

ছবি: আল জাজিরার সৌজন্যে

মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলকারী সামরিক কর্তৃপক্ষ এবং সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন মিয়ানমার অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে বহুপক্ষীয় অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এই তেল ও গ্যাস কোম্পানির আয় এ বছর একশ কোটি ডলারে পৌঁছবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। অ্যান্ড্রু বলেন, “ঐক্যবদ্ধভাবে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত না হলে অবরোধ বাস্তবিকভাবে কোনো ফল বয়ে আনবে না।”

সংবাদ সূত্র: রয়টার্স।

সংবাদ সারাদিন