|| মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা থেকে ||
করোনা টিকা নিয়ে এখনো দ্বিধা, সংশয় আর ভয়ের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার বেশীর ভাগ মানুষ। টিকা কার্যক্রম শুরুর সপ্তাহ পার হলেও টিকা নেওয়ার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জেলা শহরের নাগরিক হিসেবে পরিচিতদের মধ্যে আগ্রহ বাড়তে থাকলেও গ্রামের মানুষদের বিশেষ করে অশিক্ষিত কিংবা কম শিক্ষিতদের মধ্যে খুব একটা সাড়া নেই এ ব্যাপারে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, করোনা ভ্যাকসিনেশন শুরুর প্রথম দিনের তুলনায় প্রতিদিনই ১০০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, কুমিল্লায় গত ৮ দিনে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে বয়স্ক নারী-পুরুষই বেশি।
কুমিল্লার উপজেলাগুলোর গ্রামীণ মানুষের মাঝে টিকা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী জানান, শহর ও পৌর এলাকাগুলোর তুলনায় উপজেলার গ্রাম অঞ্চলে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণে খুব বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে টিকা গ্রহণের প্রবণতা খুবই কম। তারা কষ্ট করে উপজেলা পর্যায়ে আসতে চাইছেন না। তবে গ্রামের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষজনের মাঝে সাড়া আছে। তারা টিকা নিতে আসছেন। কিন্তু খেটে খাওয়া, দরিদ্র, অশিক্ষিতজনের মাঝে করোনা টিকার প্রতি আগ্রহ কম। ‘গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ তৈরি করতে আমরা উপজেলাব্যাপী মাইকিং করছি। কিন্তু তারপরও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ জন টিকা নিয়েছেন। তবে আমাদের চলমান প্রচারণায় মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করছি।’
কুমিল্লা নগরীর কয়েক শ্রেণির মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ মানুষের মাঝে করোনার টিকা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই। সাধারণ মানুষ এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ‘বিষয়টি আগে পর্যবেক্ষণ করি; তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তারাও বলেন আগে পর্যবেক্ষণ করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা।
এদিকে কুমিল্লায় অবস্থানরত সাংবাদিকদের মাঝেও ভ্যাকসিন নেওয়ার খুব একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খেটে খাওয়া মানুষ ছাড়াও অতি ধর্মপ্রাণ পরিবারগুলোতেও করোনার টিকার ব্যাপারে আগ্রহ কম। তাদের ধারণা, সঠিকভাবে ধর্ম-কর্ম করলে টিকা নেয়ার দরকার হবে না।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাসিন্দা মো. হাফেজ। বয়স ৬০ বছর। টিকা নেয়ার বিষয়ে তিনি আগ্রহী না। বললেন, ‘করোনা ভাইরাস আমাদের কিছুই করতে পারেনি। আল্লাহ আমাদের ভাইরাস থেকে মাফ করেছেন। এখন আর টিকা নিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করতে পারবো না। যতদিন বেঁচে থাকবো, তা আল্লাহর ইচ্ছায়। জোর করা সম্ভব হবে না।’
কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দিঘিরপাড়ের বাসিন্দা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক নারী নাম প্রকাশ করতে চাননি। তার বয়স ৪২ বছর। তিনিও সরাসরি বলে দিলেন, টিকা নেবেন না। কারণ জানতে চাইলে বললেন, এই টিকার প্রতি তার বিশ্বাস নেই। টিকা নিলে নাকি অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
করোনার টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান জানান, কুমিল্লায় প্রতিদিনই টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সোমবার দুপুরে কুমিল্লার সদর কেন্দ্রেই প্রায় দুই হাজার মানুষ টিকা নিয়েছেন। এই জেলায় ২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে উপজেলা কিংবা জেলা শহর সবখানেই মানুষ উচ্ছ্বাসের সাথে টিকা নিচ্ছেন। তবে কিছু মানুষ টিকা না নিয়ে উল্টো সাধারণ মানুষের মধ্যে গুজব ছড়াচ্ছেন। এমন প্রবণতা গ্রামে আরো বেশি। এসবের কারণে করোনার প্রতিষেধক টিকার প্রতি সবাই আস্থা আনতে পারছে না। আমরা বিভিন্নভাবে মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ, মানুষের আগ্রহের মাত্রা বাড়বে।’