|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) ||
হাওরের মানুষের একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল। চলতি মৌসুমে এ ফসল উৎপাদনে সার সংকটে কৃষকরা। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৬ জন সার ডিলার ৫৪ জন ওয়ার্ড ডিলারের মাধ্যমে সার বিক্রি করেন। পুরো উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ না আসায় সংকটে পড়েছেন কৃষক।
উপজেলার প্রতি ওয়ার্ডে সার ডিলার নির্দিষ্ট করা থাকলেও এক ওয়ার্ডের ডিলার অন্য ওয়ার্ডে অবৈধভাবে চড়াদামে সার বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভীমখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার মিহির রায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চড়াদামে সার বিক্রি করছেন বলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি। গত ১২ জানুয়ারি তিনি এই অভিযোগ জানান।
নির্বাহী কর্মকর্তা ডিলার মিহিরকে তার নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে সার বিক্রি না করবার নির্দেশ দিলেও তা মানছেন না মিহির রায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ৬ই জানুয়ারি ৭ দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দিলেও তাতে গা নেই তার।
অন্যদিকে সারের দাম বাড়াতে ডিলাররা কৃত্তিম সংকট তৈরি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফেনারবাঁক ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রেন্টু সরকার বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে কোন ডিলার নেই, এক বস্তা সার ১১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে খুচরা দোকানদারদের কাছ থেকে। না হলে খালিয়াজুরী থানার গাগলাজুর বাজার থেকে আনতে হয় বেশি দামে।
আমানীপুর বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল আলীম বলেন, কৃষকরা ১ হাজার টাকা করে সারের বস্তা কেনেন। এই বাজারে একজন দোকানদার ৩০ থেকে ৫০ বস্তা সার অন্য জায়গা থেকে কিনে এখানে খুচরা বিক্রি করে বেশি দাম দিয়ে, কারণ এখানে ডিলার নেই।
গজারিয়া বাজারের সার ডিলার সোহেল রানা বলেন, অনেক দিন ধরেই সার আসছে না, যাদের কাছে সার আছে তারা চড়াদামে বিক্রি করছে।
বেহেলী ইউনিয়নের কয়েকজন সারক্রেতা জানিয়েছেন, সারের দাম বেশী পাওয়ার জন্য ঘরে স্টক করে রেখেছে ডিলার ও অসাধু ব্যবসায়ীরা। জমিতে সময়মত সার দিতে না পারলে ফসল কম হবে।
ফেনারবাঁক ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিরেশ সরকার বলেন, ওয়ার্ড ডিলারের নাম ধরে অন্য একজন বিনাজুরা বাজারে অবৈধভাবে ৯৮০ টাকা ধরে সার বিক্রি করছে।
ভীমখালী ইউনিয়নের জাল্লাবাজ গ্রামের জিল্লুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন সার ডিলার জ্যোতিশ দাস ৮৫০ টাকা করে সার বিক্রি করে। গত দুই দিন ধরে বলে সার নাই, আবার টাকা বেশি দিলে লুকিয়ে লুকিয়ে সার বিক্রি করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করার কোন সুযোগ নাই। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ ডিলারদের সার বিক্রয় কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন। সারের সরবরাহ ঠিক আছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দোকানে সারের পরিমাণ কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত উপজেলায় সার আসছে, সারের সংকট নেই। কৃষকদের বেশি দামে সার না কিনতে অনুরোধ করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, সারের কোন সংকট নেই। আগামীকাল (শনিবার) ১০০ টন, পরের দিন (রোববার) ১৬০ থেকে ১৭০ টন সার আসবে। যারা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষি অফিসের টিম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে বলেও দাবি করেন তিনি।