রাণীশংকৈলের দিঘীয়া এখন সরিষার গ্রাম

পথ থেকে গ্রামের দিকে তাকালে মনে হবে সরিষার হলুদ ফুলে ঘিরে রেখেছে গ্রাম, তার পাশেই আবার বিঘা-খানেক জমিতে মধু সংগ্রহের জন্য বসানো হয়েছে ১২০টি মৌবাক্স।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রাণীশংকৈল, ঠা্কুরগাঁও ||

গ্রামে যাওয়ার পথ ধরে যতদুর এগুবেন ততদুর শুধু হলুদ আর হলুদ। পথের দুইধারে সরিষার ফুলে বিস্তীর্ণ মাঠ হলুদে ছেয়ে গেছে। পথ থেকে গ্রামের দিকে তাকালে মনে হবে সরিষার হলুদ ফুলে ঘিরে রেখেছে গ্রাম, তার পাশেই আবার বিঘা-খানেক জমিতে মধু সংগ্রহের জন্য বসানো হয়েছে ১২০টি মৌবাক্স। তাই স্থানীয়রা এই গ্রামের নাম দিয়েছেন “সরিষার গ্রাম, যেখানে হয় মধুরও চাষ”। এই হলুদে ঘেরা গ্রামটি হলো ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের দিঘীয়া।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

স্থানীয় কৃষকরা জানান, আগে ধান তুলে গম, ভুট্টা আবাদ করা হতো। তবে উপজেলা কৃষি  কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথের উৎসাহে এবার দীঘিয়া গ্রামের প্রায় ৭০ একর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ বিঘা জমির সরিষার বীজ বিনামূলে ১৫ জন কৃষককে দিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। তারা আরো জানান, এক গ্রামেই এত পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ এবারেই প্রথম । কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, এবারে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

সাধারণত আমন ধান তোলার পরে গম ভুট্টা রোপন করলে বোরো ধান রোপন করতে পারতো না কৃষকরা ।কৃষকদের সরাসরি আউশ ধান রোপন করতে হতো। কিন্তু সরিষা আবাদ মাত্র ৬০ থেকে ৭০ দিনে মত সময় লাগে। এতে মাত্র ২-৩ হাজার টাকা খরচে বিঘায় কমপক্ষে ৭ মণ করে সরিষা পাওয়া যায়। যা বাজারে মণপ্রতি ১৮০০ থেকে থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারে কৃষকরা। সরিষা আবাদ তোলার পর আবার কৃষকরা বোরো ও আউশ ধানও আবাদ করতে পারে। এক কথায় এক জমিতেই তিন ফসল উৎপাদন করতে পারছে কৃষকরা। আবাদী জমি পরিত্যক্ত থাকছে না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, উপজেলা জুড়ে এবারে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮শত ৫০ হেক্টর। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টরে।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

এর মধ্যে উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের দিঘীয়া গ্রামেই আবাদ হয়েছে প্রায় ৭০ একর জমিতে। কৃষকরা এবারে বারি সরিষা-১৪, ১৫ বিনা সরিষা, ৪, ৯ জাতের সরিষা আবাদ করেছে।

এদিকে দিনাজপুর জেলার সেতাগঞ্জ উপজেলা থেকে মৌ-চাষী সোহেল রানা দিঘীয়াতে এসেছেন মৌ বাক্স নিয়ে। নিজের ১২০টি মৌবাক্স বসিয়ে সপ্তাহে দু-মণের মত মধু সংগ্রহ করছেন তিনি। প্রতি কেজি মধু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান, সরিষা খুবই অর্থকরি একটি ফসল, এ এলাকার মানুষ সেটা বুঝতো না। আমি তাদের বুঝিয়ে এবারে একটি গ্রামে সরিষা আবাদে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি করেছি। পরবর্তীতে অন্য গ্রামেও এ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। তাছাড়া সরিষা আবাদের পরই কৃষকরা দুটি ধানের আবাদ করতে পারছে । যা থেকে তারা বেশি আয় করতে পারছে।

সংবাদ সারাদিন