বালুখেকোদের বিরুদ্ধে সোচ্চার পাঁচবিবির মানুষ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি বাগজানার কুটাহারার ছোট যমুনা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলায় হুমকিতে পড়েছে আশপাশের এলাকা। নির্বিচারে নদীর বালু তোলায় স্থানীয় কৃষক, সংখ্যালঘু ও মসজিদের আবাদি কৃষি জমি প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে নদীতে চলে যাচ্ছে। বসতবাড়ী-মুরগির খামার ভেঙ্গে যাচ্ছে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট ||

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি বাগজানার কুটাহারার ছোট যমুনা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলায় হুমকিতে পড়েছে আশপাশের এলাকা। নির্বিচারে নদীর বালু তোলায় স্থানীয় কৃষক, সংখ্যালঘু ও মসজিদের আবাদি কৃষি জমি প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে নদীতে চলে যাচ্ছে। বসতবাড়ী-মুরগির খামার ভেঙ্গে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় কেউ কিছু বলবার সাহস করে না। বাধা দিলেও হুমকি ধামকি দিচ্ছেন তারা।

নদীর পাশের ফসলী জমি রক্ষার জন্য ২০১৮ সাল থেকে প্রশাসনের কাছে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগিরা। অবশেষে প্রতিকার চেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক সহ এলাকাবাসীরা।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

অনুসন্ধান করে জানা যায়, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি বাগজানার কুটাহারা ইজারাভূক্ত ছোট যমুনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ৬০-১০০ ফিট বোরিং করে দীর্ঘদিন থেকে বালু তুলে আসছে স্থানীয় প্রভাবশালী ইজারদাররা। এর ফলে নদীর পাশে মসজিদের প্রায় ৪ বিঘা ফসলী জমি ও হিন্দু সম্প্রদায়সহ স্থানীয়দের প্রতিনিয়ত ৫০ বিঘার বেশী ফসলী জমি ভেঙ্গে নদীতে চলে গেছে।

এছাড়াও চরম ঝুঁকিতে পড়েছে নদীর পাশের বসতবাড়ী ও মুরগির খামার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। বসতবাড়ী, মুরগির খামার, রাস্তা-ঘাট, পরিবেশ, কৃষকদের ফসলী জমি, সরকারি খাস জমি ক্ষতির আশংঙ্কার কারণে ২০১৮ সালের ২৫শে জানুয়ারি, ৪ ও ২৮শে ফেব্রুয়ারি এবং ২০২০ সালের ১২ ও ২২শে নভেম্বর কয়েক দফা সংখ্যালঘু, মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিকার চেয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ ও তাদের কৃষি জমি রক্ষার জন্য লিখিত অভিযোগ করেন ও অনুলিপি দেন বিভিন্ন দফতরে। তারপরও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওই এলাকার ভুক্তভোগীরা জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে ১৪ই জানুয়ারি কুটাহারা বালুমহলের ইজারা বাতিল, ফসলী জমি রক্ষাসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এছাড়াও ইজারা বহির্ভূত আটাপাড়া ব্রিজের পাশেই গঙ্গাপ্রসাদ এলাকায় জোড় করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আটাপাড়া গঙ্গাপ্রসাদ এলাকার অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে রতনপুর, রামভদ্রপুর, চেঁচড়া মোড়ের হাট, আটাপাড়া, হিলি পোর্টের একমাত্র যোগাযোগের ব্রিজটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ভুক্তভোগী কৃষক নোমান, মোফাজ্জল হোসেন, স্বপন কুমার, গোলাম রব্বানী, কার্তিক চন্দ্র, সাধন চন্দ্র মহন্তসহ গ্রামবাসীরা বলেন, ‘মেশিন দিয়ে বালু তোলার কারণে আমাদের জমি নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ জমি না থাকলে কি খায়ে বাঁচমো, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ইউওনো, ডিসি সবার কাছে আমরা বিচার দিয়ে কোন বিচার পায়নি। বালু যারা তোলে তাদের নিষেধ করলে হাসুয়া-দা নিয়ে আমাদের মারতে আসে। এখানে বালু তোলা বন্ধ করুক আমাদের সরকার বাঁচাক ও এই ইজারা সরকার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হোক।’

বালু উত্তোলনের স্থানে তাদের বক্তব্য নিতে গেলে সংবাদকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে ইজারদাররা কোন কথা না বলে দ্রুত সটকে পড়েন।

পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বরমান হোসেন মুঠোফোনে জানান, খবর পাওয়ার পরপরই অভিযান চালানো হয়েছে। নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই বালু উত্তোলন করতে বলা হয়েছে। আটাপাড়া গঙ্গাপ্রসাদ এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করতে পারে।

জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ আছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের তথ্য পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সংবাদ সারাদিন