শুসেন অনিল পূজা উদযাপন পরিষদ ফেনী শাখার নতুন নেতা

সম্মেলনে জেলা নেতৃবৃন্দের সরাসরি ভোটে শুসেন চন্দ্র শীলকে সভাপতি ও অনীল নাথকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ফেনী ||

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ফেনী জেলা কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন শুক্রবার ৮ই জানুয়ারি বিকেলে ফেনী জয়কালী মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা নেতৃবৃন্দের সরাসরি ভোটে শুসেন চন্দ্র শীলকে সভাপতি ও অনীল নাথকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। বিদায়ী কমিটির সভাপতি রাজিব খগেশ দত্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীলের পরিচালনায় সম্মেলনের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে  মিলন কান্তি দত্ত বলেন, হিন্দু তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার নিশ্চিত ও যে কোন বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার জন্য বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কাজ করে৷ যেখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অন্যায় অবিচার হয়েছে সেখানেই আমাদের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ প্রতিরোধ করেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় হিন্দুরা পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক ভালো আছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন শান্তি প্রিয় এবং বিশ্বাসী জাতি হিসেবে পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত। আমরা নিজেদের ধর্মকে যেমন অন্তরে লালন করি তেমনি অন্য ধর্মকেও সম্মান করি৷ যারা ভিন্ন ধর্মের প্রতি অসম্মান করে তারা প্রকৃতপক্ষে কোন ধর্মের হতে পারে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদের সন্তানদের হিন্দু ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিন। পিতা-মাতা ও গুরুজনদের ভক্তি শ্রদ্ধা করার শিক্ষা দিন। নারীদের প্রতি সদাচারণ করার অনুরোধ করেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন,এক শ্রেণির ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম নির্যাতন করেছে। এদেশটাকে একটা সাম্প্রদায়িক  রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে। এরা প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থানকারী। বর্তমান সরকারের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিগত  কোন সরকার হিন্দু তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা ও অধিকার আদায়ে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের বর্তমান সরকার হিন্দুদের অধিকার নিশ্চিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন অপশক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না৷ যেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন হবে সেখানে সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। মনে রাখতে হবে নিজেদের অনৈক্যের কারণে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ পেয়ে যাবে৷ নিজেদের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান তিনি।

বিদায়ী কমিটির সভাপতি রাজিব খগেশ দত্ত বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ ফেনীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর থেকে কেন্দ্র নির্দেশিত কর্মসূচি ছাড়াও জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সেবায় কাজ করার চেষ্টা করে গেছি। ভবিষ্যতেও এই সংগঠনের সাথে থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাবো৷

সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল বলেন,বর্তমানে ফেনী জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদ নির্বিঘ্নে বসবাস ও স্ব স্ব ধর্ম পালন করতে পারছে। কারণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনার সরকার।

ফেনী সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। আমাদের যে কোন প্রয়োজন কিংবা আবদারে তিনি সবসময় সাড়া দিয়েছেন। হিন্দু তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জননেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর জন্য আমাদের ভালোবাসা ও সমর্থন সবসময় থাকবে।

দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জে.এল ভৌমিক, এডভোকেট প্রিয়রঞ্জন দত্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সাংবাদিক সন্তোষ শর্মা, বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব দে।

করোনা মহামারী পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সংক্ষিপ্ত পরিসরে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। এতে অংশ নেয় জেলা ও উপজেলার প্রায় ৬ শতাধিক নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গীতা পাঠ করেন হীরা লাল। করোনা মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী ফেনী জেলা ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য শোকপ্রস্তাব করা হয়।

 

সংবাদ সারাদিন