|| বার্তা সারাবেলা ||
পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের তান্ডবে নজিরবিহীন সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। কংগ্রেস ভবনে ক্যাপিটল হিলে চালানো হয়েছে হামলা, দেওয়া হয়েছে আগুন। এ পর্যন্ত খুন হয়েছেন চারজন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটনে।এদিকে মার্কিন কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেনের জয় অনুমোদন করায় সেখানে সহিংস অবস্থান নেয় ট্রাম্প সমর্থরা। তারা ট্রাম্পের পরাজয় উল্টে দেওয়ার চেষ্টায় কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরের পর হামলা ও ভাংচুর শুরু করে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প সমর্থকরা হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ক্যাপিটল ভবন কার্যত দখল করে নিলে অধিবেশন মুলতবি করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস। পুলিশ পাহারা দিয়ে আইনপ্রণেতাদের সরিয়ে নেওয়া হয় আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলে। যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকেও পাহারা দিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের নেয় পুলিশ। এরপর ক্যাপিটলকে ট্রাম্প সমর্থকদের দখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। পরের তিন ঘণ্টায় হলওয়েগুলো দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকদের ছোটাছুটি ও বিভিন্ন দফতরে খোঁজাখুঁজি, হাঙ্গামা-বিশৃঙ্খলায় এক নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সহিংসতার মধ্যে গুলিতে মারা পড়েন এক নারী। পরে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর জানায় ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ। এফবিআই জানায়, তারা দু’টি সম্ভাব্য বিস্ফোরক ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে কারফিউ জারি করা হয়। শহরে ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার।
বিবিসি জানিয়েছে, ওই হাঙ্গামার পর পুলিশ অন্তত ৫২ জনকে গ্রেফতার করেছে; তাদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গ করার জন্য।
৩রা নভেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকমাস ধরে যে বিভেদ সষ্টিকারী উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছিল ক্যাপিটলে হামলা তার চূড়ান্ত পরিণতি বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স।
ভোটে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ ছাড়াই বারবার দাবি করে আসছিলেন ট্রাম্প এবং তার পরাজয় উল্টে দিতে তাকে সাহায্য করার জন্য সমর্থকদের আহ্বান জানাচ্ছিলেন। হোয়াইট হাউজের কাছে সমবেত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার পর সহিংস এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করতে আইনপ্রণেতাদের চাপ দেওয়ার জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি লড়াইয়ে নামতে বলেন তিনি।
হোয়াইট হাউজের কাছে সমবেত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার পর এই গোলযোগ দেখা দেয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করতে আইনপ্রণেতাদের চাপ দেওয়ার জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি লড়াইয়ে নামতে বলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নির্বাচনের আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ট্রাম্প। ক্যাপিটলে হামলার আগে হোয়াইট হাউসের কাছে কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি। ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের ক্ষোভ জানাতে সমর্থকদের ক্যাপিটলের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে বলেন। এরপরই শুরু হয় সহিংসতা। দাঙ্গাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ক্যাপিটলের ভিতরে কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে।
ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি জানিয়েছেন, আক্রমণকারীরা যন্ত্রণাদায়ক রাসায়নিক নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার সাড়ে ৫টার একটু পরে ক্যাপিটল ভবন নিরাপদ বলে ঘোষণা করে পুলিশ। এরপর নির্বাচনী জয়ের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু করতে রাত ৮টার পর আইনপ্রণেতারা অধিবেশন ফের শুরু করেন। এরপর অধিবেশনের সভাপতিত্ব করা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেন, আজ যারা আমাদের ক্যাপিটলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছ- তোমরা জয়ী হতে পারবে না। চলুন আমরা কাজ শুরু করি। কংগ্রেস সদস্যরা হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করেন তাকে। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনল ঘটনাটিকে ‘ব্যর্থ বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়ে ‘অনাচার ও হুমকির কাছে মাথা নত করবো না’ বলে প্রতিশ্রুতি রাখেন।
বলেন, আমরা আমাদের অবস্থানে ফিরে এসেছি। সংবিধানের অধীনে এবং আমাদের জাতির জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। আর আজ রাতেই আমরা তা করতে যাচ্ছি, বলেন তিনি।
এরআগে বুধবার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনের বিরোধিতা করে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও ছিলেন। সেই সমাবেশের বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। রয়টার্স জানায়, এই সমাবেশ থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে কয়েকশ ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এক পর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ। ট্রাম্প সমর্থক কয়েকজন আইনপ্রণেতার নির্বাচনের ফল বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলার মধ্যেই সেখানে এই গোলযোগের সৃষ্টি হয়। এ সময় পুলিশ অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত আইনপ্রণেতাদের তাদের আসনের নিচ থেকে গ্যাস মাস্ক বের করে পরার পরামর্শ দেয়।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে মিশিগানের কংগ্রেস সদস্য হ্যালি স্টিভেন্স টুইটে লিখেছেন, আমি আমার অফিসের এক জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এটা আমাকে লিখতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মিউরিয়েল বাউজার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শহরজুড়ে কারফিউ জারি করেছেন।
ক্যাপিটল পুলিশকে সহায়তা করতে কংগ্রেস ভবনে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা, এফবিআই এজেন্ট এবং মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। কারফিউ শুরু হওয়ার পর ন্যাশনাল গার্ড সেনা ও পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ক্যাপিটলের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেয়।
হোয়াইট হাউজের কাছে সমবেত কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে ট্রাম্প তার সেই পুরনো অভিযোগ “ব্যাপক জালিয়াতির মাধ্যমে তার কাছ থেকে নির্বাচন চুরি করে নেওয়া হয়েছে” বলে দাবি করেন। যদিও ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা সবাই ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনে তেমন কোনো জালিয়াতি না হওয়ার কথা বলেছেন। ওই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক ইলেকটোরাল ভোটের হিসাবে ট্রাম্পের ২৩২টির বিপরীতে বাইডেনের পক্ষে আসে ৩০৬টি। এরপর দেশের বিভিন্ন স্টেটে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আদালতে গিয়ে বিফল হয় ট্রাম্প শিবির। যেসব স্টেটে ট্রাম্প অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন সেই সব স্টেটের নির্বাচনের ফল বাতিলের জন্য তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে চাপ দিচ্ছেন, যদিও তার এই ক্ষমতা নেই। কংগ্রেসে স্বীকৃতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এক্ষেত্রে কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা অ্যারিজোনাসহ কয়েকটি স্টেটের ফল বাতিলের প্রস্তাব তুললে তা কয়েক ঘণ্টার আলোচনার রসদ জোগাত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনকে জয়ী হিসেবে ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই হঠাৎ করে ট্রাম্প সমর্থকরা সেখানে তাণ্ডব শুরু করে। ভাঙচুরের পাশাপাশি সেখানে গোলাগুলিও হয়েছে। এর পরপরই ওয়াশিংটনে কারফিউ জারি করা হয়। বুধবার কংগ্রেস অধিবেশনের বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। এদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও রয়েছেন। ওই সমাবেশের বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে ওয়াশিংটন ডিসির নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য কারফিউ দেয়া, জরুরি পণ্য সরবরাহের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ২১ জানুয়ারি দুপুর ৩টা পর্যন্ত এই ঘোষণা কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ আগামী ২০শে জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে নতুন করে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত শহরে কারফিউ জারি থাকবে।
এদিকে পার্লামেন্ট ভবনে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় হোয়াইট হাউসের তিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকজন পদত্যাগ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউস, সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিকেটা ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অফ স্টাফ স্টেফানি গ্রিশ্যাম বুধবার রাতে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে সারাহ ম্যাথিউস বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনে সেবা দিতে পেরে এবং যে নীতিগুলো আমরা গ্রহণ করেছি তাতে আমি গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, আজ আমি যা দেখেছি তাতে আমি ভীষণভাবে বিরক্ত। আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি যা এই মুহূর্ত থেকে কার্যকর হবে। আমাদের জাতির একটি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রয়োজন। ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮১২ সালে যুদ্ধের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন এমন আগ্রাসনের সাক্ষী হলো। ১৮১৪ সালে ওয়াশিংটনে অভিযান চালানের সময় ভাইস অ্যাডমিরাল স্যার আলেক্সান্ডার ককবার্ন ও মেজর জেনারেল রবার্ট রোসের নেতৃত্বে নির্মাণাধীন ক্যাপিটল ভবনে আগুন জালিয়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। তবে প্রবল বর্ষণের কারণে সে যাত্রায় ওই ভবনটি বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়।
ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিকাল সোসাইটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পার্লামেন্ট ভবন শুধুমাত্র একটি অবকাঠামো নয়। এটি তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি আমেরিকার গণতন্ত্র এবং আমাদের জীবন-যাপনের মূর্ত প্রতীক। সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে কারফিউ ভঙ্গ করার দায়ে। বুধবার আইন প্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন ঠিক সে সময়েই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক দেশটির আইনসভা কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে সহিংসতা চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হারার ক্ষোভ সইতে না পেরে কংগ্রেস ভবনে তাঁর সমর্থকদের হামলার ঘটনায় গতকাল বুধবার এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক ও টুইটার। ওই দাঙ্গার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দুটির কর্তৃপক্ষ ট্রাম্পের ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। খবর সিএনএনের। টুইটার কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারেও প্রথমবারের মতো সতর্ক করে দিয়েছে তারা। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়ে তারা এটাই বুঝিয়েছে যে ট্রাম্প টুইটারের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করেছেন। ফেসবুকের কর্তৃপক্ষ তাদের এই প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পকে পোস্ট করা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য আটকে দেয়। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এর আগে দাঙ্গায় অংশগ্রহণকারী সমর্থকদের পাঠানো ট্রাম্পের একটি ভিডিও অপসারণ করে তারা। ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রামেও তিনি ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ থাকবেন। টুইটার বলেছে, ‘নাগরিক ঐক্য বজায় রাখা নিয়ে আমাদের যে নীতিমালা রয়েছে, ট্রাম্প তা বারবার ও ভীষণভাবে লঙ্ঘন করেছেন। তাই তাঁর করা তিনটি টুইট আমরা সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। যার অর্থ, ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট এই টুইট মুছে ফেলার পর থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকবে।’ টুইটার আরও বলেছে, ভবিষ্যতে নিয়মনীতি ভাঙলে ফলাফল হিসেবে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এদিকে ফেসবুকের কর্তৃপক্ষ তাদের এই প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্পকে পোস্ট করা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য আটকে দেয়। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এর আগে দাঙ্গায় অংশগ্রহণকারী সমর্থকদের পাঠানো ট্রাম্পের একটি ভিডিও অপসারণ করে তারা। ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রামেও তিনি ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ থাকবেন। এক টুইটে ফেসবুক বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পেজের বিরুদ্ধে আমরা দুটি নীতি লঙ্ঘন করার প্রমাণ পেয়েছি। এ কারণে তাঁর অ্যাকাউন্ট ২৪ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হবে। ফলে এ সময়ে প্ল্যাটফর্মটিতে তিনি কোনো পোস্ট করতে পারবেন না। টুইটার আরও বলেছে, ভবিষ্যতে নিয়মনীতি ভাঙলে ফলাফল হিসেবে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফেসবুকের নীতিমালা অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করলে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির মুখপাত্রের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দুটির এমন পদক্ষেপে নাগরিক অধিকার নিয়ে সক্রিয় বিভিন্ন গোষ্ঠী নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ট্রাম্পকে এসব প্ল্যাটফর্মে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।