|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা ||
গত প্রায় ৪৪ বছর ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দরে কোন বিমান ওঠা-নামা করেনি। তারপরও শুধু এই বিমানবন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করেই প্রতিদিন চলাচল করেছে দেশ-বিদেশের অন্তত ৪০টি বিমান। শুধু উদ্যোগের অভাবেই চালু থেকেও অচল পড়ে রয়েছে এই বিমানবন্দরটি। কর্তৃপক্ষীয় উদ্যোগ নিলেই কুমিল্লা বিমানবন্দরে আবারও ওঠা-নামা শুরু করবে বিমান।

দেশের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কুমিল্লা জেলায়। তাই রেমিট্যান্স আয়েও শীর্ষস্থানে রয়েছে এই কুমিল্লা। এই জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। যার মধ্যে ১৩ শতাংশই বিদেশে থাকেন। এছাড়া কুমিল্লা বিমানবন্দর সংলগ্ন রয়েছে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। তাই এই বিমানবন্দরটি পুনরায় সচল হলে প্রবাসীদের আসা-যাওয়ার সুবিধার পাশাপাশি ইপিজেডে অনেক বিদেশি বিনিয়োগে আসবে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে কুমিল্লার ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে মোট তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। এছাড়া আরও সাতটি শর্ট টেক অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং (স্টল) বিমানবন্দর রয়েছে। এই সাতটি স্টল বিমানবন্দরের একটি কুমিল্লা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১-৪২ সালে নগরীর দক্ষিণ পাশে নেউরা, ঢুলিপাড়ার ও রাজাপাড়া এলাকার পাশে ৭৭ একর ভূমিতে গড়ে তোলা হয় এই বিমানবন্দর। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ রুটে সচল ছিল। পরে অজ্ঞাত কারণে এই বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ হয়ে যায়। এখনো ওই একই অবস্থায় রয়েছে।
কুমিল্লা বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিমান ওঠা-নামা না করলেও এখনও চালু অবস্থাতেই আছে এই বিমানবন্দরটি। এ বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী অনেক বিমানকে আকাশপথের সিগন্যাল দেওয়া হয়। প্রতিদিন এই বিমানবন্দর থেকে সিগন্যাল ব্যবহার করে অন্তত ৪০টি বিমান। এতে প্রতি মাসে আয় হয় ৩০ লাখ টাকার বেশি। তবে এটির সিগন্যাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের বিমান। আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমানও এই রুটে চলাচল করে।
সূত্রটি আরও জানায়, কুমিল্লা বিমানবন্দরে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিস, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিএইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ সব সুবিধাই রয়েছে। যাত্রীদের জন্য আলাদা রুমও আছে। সকল সুবিধা থাকার পরও শুধু উদ্যোগের অভাবে গত চার দশকের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে এই বিমানবন্দরটি। এটি চালু করতে খুব বেশি অর্থেরও প্রয়োজন নেই। বিমানবন্দরের রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমিও। এখন শুধু উদ্যোগ নিয়ে রানওয়ে মেরামত, ফায়ার সার্ভিস ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের কয়েকজন জনবল নিয়োগ করলেই কুমিল্লা বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে স্টল বিমান চলাচলের পাশাপাশি কলকাতা, আগরতলাসহ বিভিন্ন রুটে বিমান চলাচল সম্ভব হতে পারে। এসব কাজের জন্য প্রয়োজন মাত্র ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। বিমানবন্দরটি চালু হলে বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থান ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করতে পারবেন। সুবিধা হবে প্রবাসীদেরও, বাঁচবে সময়। পাশাপাশি ইপিজেডসহ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।



জেলার নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা বাহরাইন প্রবাসী মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়খালী অঞ্চলের ৬ জেলায়। গত চার দশকের বেশি সময় ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকায় আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। দ্রুত বিমানবন্দরটি চালু করা দরকার। পাশাপাশি এই বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, আমরা কয়েক দশক ধরে কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর দাবি করে আসছি। এটি চালু হলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য অনেক ভালো হবে। আমাদের বিমানবন্দরতো সচল আছেই, শুধু চালুর দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজন হলে আমরা এটির জন্য আন্দোলনও করতে রাজি।



কুমিল্লা ইপিজেডে কর্মরত কয়েকজন জানান, এই ইপিজেডে বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ না হওয়ার কারণে আগ্রহ থাকার পরও অনেক বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগ করতে আসছেন না। ইপিজেডের পাশের বিমানবন্দরটি চালু হলে অনেক বিদেশি ব্যবসায়ী এখানে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করবেন।
কুমিল্লা বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল গণি বলেন, এই বিমানবন্দরের সব কিছুই রয়েছে। শুধু উদ্যোগের অভাবে এখানে বিমান ওঠা-নামা করে না। বর্তমানে আমাদের এখানে ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। প্রতিদিন আমাদের সিগন্যাল ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক রুটের ৩৫ থেকে ৪০টি বিমান। এখান থেকে প্রতি মাসে আয় হয় ৩০ লাখ টাকার মতো।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে একটু উদ্যোগ নিলেই বিমানবন্দরটিতে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল শুরু হতে পারে। এজন্য রানওয়ে মেরামতসহ কিছু কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আরও ২০/২২ জন লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। আমরাও চাই দ্রুত এই বিমানবন্দরটি চালু হোক।