প্রচলিত আইনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করছে সরকার

বাণিজ্যিক বিরোধ নিরসন কল্পে দেশের বিদ্যমান আইন সমূহে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে সরকার।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, উচ্চ আদালত ||

বাণিজ্যিক বিরোধ নিরসন কল্পে দেশের বিদ্যমান আইন সমূহে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) বিধান অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে সরকার। শনিবার ২৬শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক) এর ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এতথ্য জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এতে করে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সহজতর ও সময় সাশ্রয়ী হবে।

আনিসুল হক বলেন, কোভিড-১৯ থেকে উদ্ভূত অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ডিজিটাল মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশে সরকার “আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার আইন ২০২০” প্রণয়ন করেছে।

“প্রথম নয় বৎসর পূর্তি উদযাপন: বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিয়াক এর প্রভাব।” প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এই ওয়েবিনারে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগ ইতিমধ্যেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে, যদিও ভার্চুয়াল এডিআর প্রবর্তনের বিষয়ে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। দেশের সকল আদালতে বিচারাধীন থাকা ৩৬ লাখ মামলার প্রেক্ষাপটে এডিআরকে এগিয়ে নিযে যাওয়া আমাদের অবশ্য করণীয়। ফোন কনফারেন্স ও ইন্টারনেট সমর্থিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশিত এডিআর অনুশীলন করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, বৈশ্যিক মহামারী দ্বারা সৃষ্ট চলমান মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে টিকে থাকতে হলে এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এডিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই।

সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের  বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান (এম আর হাসান) বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সালিশী আইন ২০০১-এ এডিআর এর বিধান সমূহ পর্যালোচনা করে বলেন, এতে বিয়াক এর প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা নির্দেশিত আছে। তিনি বর্তমান সালিশী আইন সংশোধনের লক্ষ্যে কতিপয় প্রস্তাব পেশ করেন যাতে বিদেশী সালিশী এওয়ার্ড বাস্তবায়ন সহজতর হয় এবং আরবিট্রেটর নিয়োগে যোগ্যতার বিষয়টি প্রাধিকার পায়।

বিয়াক বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটির আয়ের প্রধান উৎস বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকা এবং সালিশী ও মধ্যস্থতা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিয়াকের টিকে থাকার লক্ষ্যে আইনমন্ত্রীর কাছে আর্থিক অনুদান চান। বাণিজ্যিক বিরোধ  নিষ্পত্তিতে বিয়াককে প্রাতিষ্ঠানিক প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে এডিআর পদ্ধতি অনুসরণ করার বিষয়ে মাহবুবুর রহমান মন্ত্রীর সমর্থন কামনা করেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো, মইনুল কবির তাঁর ভাষণে বিয়াক-কে সালিশী ও মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে একটি অনন্য সাধারণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং সম্প্রতি তাঁর বিভাগের সাথে যৌথভাবে বিয়াক কর্তৃক আয়োজিত একটি ওয়েবিনার এবং ওই বিভাগের কর্মকর্তাদের বিয়াক কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়গুলো স্মরণ করেন। এখন যেহেতু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় প্রক্রিয়ায় রয়েছে, এ সময়ে এডিআরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে দেশে অধিকতর সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আনয়ন করার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে বলে সচিব মত প্রকাশ করেন।

বিয়াক-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ এ. (রুমি) আলী তাঁর উদ্ধোধনী বক্তব্যে বলেন যে, উন্নত দেশগুলো দৃঢ় এডিআর কাঠামো সৃষ্টি করেছে। বিশ^ব্যাংকের ডুইং বিজনেস এর চুক্তি বাস্তবায়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশে^র ১৯০ টি অর্থনীতির মধ্যে ১৮৯ তম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আদালতে যাওয়ার পূর্বে এডিআর পদ্ধতির প্রয়োগ নিশ্চিত করার এখনই সময়।  এডিআরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আদালতের কার্যক্রামের সাথে এডিআর পদ্ধতির সমন্বয় ঘটানোর জন্য তিনি সরকার ও ব্যবসায়ী মহলকে আহবান জানান।

বিচারক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, ব্যাংকার, শিক্ষাবিদ এবং কূটনৈতিক মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।

সংবাদ সারাদিন