|| আবুল হোসেন সবুজ, গাজীপুর থেকে ||
শীতের সঙ্গে নানাপদের পিঠাপুলির সম্পর্ক যেনো অবিচ্ছেদ্য। তবে মানুষ বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে এই অবিচ্ছেদ্যতার সঙ্গে যোগ হয়েছে বানিজ্য। অনেকেই এই পিঠাবাণিজ্যকে নিয়েছেন জীবিকার উপায় হিসেবে। তাইতো শীত এলেই দেশের প্রায় সর্বত্রই জমে ওঠে মৌসুমি এই পিঠাবাণিজ্য। গাজীপুর জেলাও এর বাইরে নয়। এই জেলাশহরের বিভিন্ন এলাকাতে শীতের শুরু থেকেই জমে উঠেছে পিঠা বিক্রির ব্যবসা।
জেলার চান্দনা চৌরাস্তা, শিববাড়ি মোড়, মুক্তমঞ্চ মোড়, রেল গেইট সংলগ্ন কলাপট্টি, রাজবাড়ি মাঠের প্রধান ফটক সংলগ্ন, হাড়িনাল বাজার এবং কাপাসিয়া উপজেলার ধান বাজার, খেয়াঘাট মোড়, কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড, তরগাঁও মেডিকেল মোড়, চালা বাজার চৌরাস্তা, কামারগাঁও নামা বাজার, বারিষাব বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মেইন রোডের ফুটপাত ও এলাকার বিভিন্ন অলিতে-গলিতে বসেছে পিঠা বিক্রির দোকান। এসব দোকানে বেশি পাওয়া যায় চিতই, ভাঁপা ও পুলিসহ নানপদের পিঠা।

পিঠা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা সংবাদ সারাবেলাকে জানান, পিঠা তারা সব সময়ই বিক্রি করেন না। এটা তাদের সিজনাল ব্যবসা। তবে কোন কোন লোক সারা বছরই পিঠা বিক্রি করে থাকেন। প্রত্যেকদিন দুপুরের পর থেকেই পিঠা বিক্রি শুরু হলেও সন্ধ্যার পরই বিক্রির বেশি হয়। সন্ধ্যার পর থেকে যেহেতু শীত বাড়তে থাকে তখনই পিঠার দোকান গুলোতে চিতই ও ভাঁপা পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সের ও শ্রেনী পেশার মানুষ। পিঠা খাওয়ার জন্য তৈরী করে রাখা হয়েছে সরিষা, শুটকি, ও ধনিয়া পাতাসহ বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু ভর্তা। অনেকে আবার চিতই পিঠার সাথে ডিম দিয়ে খেতেও ভালোবাসেন। সেটাও বিক্রি হয় বেশ।



শীতের পিঠা বিক্রেতারা অধিকাংশই নিম্মবিত্ত পরিবারের পুরুষ, মহিলা ও তাদের ছেলে মেয়েরা। তবে গাজীপুর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আগের মতো আর পিঠা বিক্রি হয় না, করোনা মহামারিকেই এর প্রধান কারণ বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পিঠা তৈরী ও বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিক্রেতারা জানান, সারাদিন অন্য কাজগুলো শেষ করে বাড়তি একটা আয়ের জন্য তারা বিকেলেই শুরু করেন পিঠার ব্যবসা। প্রতিটা পিঠা ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা দামেও বিক্রি হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ কেজি পরিমাণ চালের গুড়োর পিঠা বিক্রি হয়।



এদিকে জেলা সদরের রেলগেইট এলাকায় পিঠা খেতে আসা রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে অনেককেই পিঠা খেতে দেখা যায়। নানানো ব্যস্ততায় বাড়িতে পিঠা বানানো ও খাওয়ার সময় হয়ে ওঠেনা। তাই এখানে এসেই পিঠা খেয়ে একটু স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা মাত্র। পিঠা খাওয়া শেষ করে অনেকেই দেখা গেছে আবার বাড়িতে নিয়ে যান ছেলে-মেয়ের জন্য।



কাপাসিয়া উপজেলার কামারগাঁও নামা বাজার এলাকার পিঠা বিক্রেতা দিলীপের মা জানান, শীত আসতেই দোকানে কাজের চাপ বেড়ে যায়। পিঠা তৈরী করাসহ সকল ধরণের কাজ তাকেই করতে হয়। ক্রেতাদের পিঠার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পাড় করতে হয় তাকে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে পিঠা বানানো ও বিক্রি।
তবে এই শীতে করোনা মহামারির কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেচা-বিক্রি তুলনামূলক ভাবে অনেক কম।