বঙ্গবন্ধু ও আন্তর্জাতিকতা নিয়ে আলোচনা আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ে

বঙ্গবন্ধু শুধু তাঁর দেশের স্বাধীনতার জন্যই সংগ্রাম করেননি, তিনি বিশ্ব মানবতার জন্যও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। উপাচার্য আরও উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন মহান ব্যক্তিত্ব এবং নেতা। তিনি বলেন যে আফ্রিকাসহ বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ।

|| বার্তা সারাবেলা ||

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে নাইজেরিয়ার আবুজায় গেলো ৭ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু ও আন্তর্জাতিকতাবাদ’ বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশন এই আয়োজন করে। আলোচনায় পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু’র দর্শন ও ভাবনা নিয়ে কথা হয়। অন্যান্যের মধ্যে, আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল-রাশিদনাল্লাহ এবং প্রথম সচিব ও ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিদোষ চন্দ্র বর্মন আলোচনায় অংশ নেন।

উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল-রাশিদনাল্লাহ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু শুধু তাঁর দেশের স্বাধীনতার জন্যই সংগ্রাম করেননি, তিনি বিশ্ব মানবতার জন্যও নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। উপাচার্য আরও উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন মহান ব্যক্তিত্ব এবং নেতা। তিনি বলেন যে আফ্রিকাসহ বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজও প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও সংহত করার ওপর জোর দেন।

ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বিদোষ চন্দ্র বর্মন তারঁ বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, বিশ্বশান্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন ও আদর্শের মূলমন্ত্র। পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর মূলনীতি, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’-এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য তাঁর ভালোবাসার বহি:প্রকাশ ঘটেছে।

আন্তর্জাতিক শান্তি বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু সর্বদা বিশ্বের নিপীড়িত, অবদমিত, শোষিত ও অধিকার-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণসভায় বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি অপরিহার্য’। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মানবতার বিকাশের জন্য শান্তির প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের সকল অঞ্চলের ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণকামী মানুষের সংগ্রাম সমর্থন করেছেন এবং এক্ষেত্রে সমর্থন দিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও উৎসাহ জুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর শান্তিবাদী দর্শনের জন্য উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্বে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছেন।

জাতিসংঘ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, কমনওয়েলথ এবং ওআইসিতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ও অবদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার বলেন, বঙ্গবন্ধু অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও পরমানু অস্ত্র পরীক্ষার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার পাশপাশি বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকির মতো আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, দুরুহ বাধা অতিক্রমে মানবজাতির অমিত সম্ভাবনার কথা বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছেন এবং বিশ্ব নেতাদেরকে মানবজাতির দুর্ভোগের কারণ না হয়ে মানবজাতির প্রগতির জন্য ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারত উপমহাদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধুর নীতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মি. বর্মন বলেন, সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও বহি:বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু তাঁর সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন।

মি. বর্মন, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, বঙ্গবন্ধুর বাল্যজীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের কথাও সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন।

আলোচনাশেষে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আবুজা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে নাইজেরিয়ার সরকার কর্তৃক অবমুক্ত স্মারক ডাকটিকিট হস্তান্তর করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ও আন্তরিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।

উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে, অধ্যাপক ক্লিমেন্ট আলাওয়া, উপ-উপাচার্য, অধ্যাপক মালাম রেফুই আহমেদ বাবা, অধ্যাপক ইওয়েমা একেজোনা, অধ্যপাক উবোমবাসে, অধ্যাপক এম এ কাচা এবং অধ্যাপক স্টিফেন গার্বা উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. মুসাওলা ওফে উক্ত সভায় ধন্যবাদ জানান।
সংবাদ সূত্র: তথ্য বিবরণী

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন