রাজধানীর পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোন না কোনভাবে মাদকে আসক্ত। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পটে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক নেয়। এরা সাধারণত গাঁজা, ড্যান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে এবং পেট্রোল শুঁকে নেশা করে।
মৌচাক এলাকা থেকে নেশাগ্রস্ত এসব শিশুদের ছবি তুলেছেন সুমন মোহন্ত।
ছবি তুলেছেন সুমন মোহন্তএদেরই একজন হাবিব (ছদ্মনাম) জানায়, সারাদিনের সংগৃহীত ভাঙারি বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়ে একবেলা খাবার কিনে খায়, আর বাকি দুই বেলা নেশা করে সে। নেশার এই উপকরণটির নাম ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ বা ড্যান্ড্রাইট আঠা, তবে ‘ড্যান্ডি’ নামেই বেশি পরিচিত।
ছবি: সংগৃহিতড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ নামক আঠালো বস্তুটি (গাম) দিয়ে নেশা করে হাবিবের মতো অসংখ্য পথশিশু-কিশোর। টলুইন সমৃদ্ধ এই অ্যাডহেসিভ মূলত ছোটখাটো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, ডিভাইস, চামড়া ও প্লাস্টিকের পণ্য জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। মূলত ‘ড্যান্ডি’ আঠা ঘ্রাণযুক্ত এবং ঘ্রাণ থেকেই এক ধরনের আসক্তি হয়। ভারতে তৈরি ড্যান্ড্রাইট অ্যাডহেসিভ টিউবে এবং কৌটায় দু’ভাবে পাওয়া যায়। প্রতিটি টিউবের দাম ১৫০-২০০ টাকা, কৌটার দাম ৩৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। এগুলো সাধারণত হার্ডওয়ারের দোকানে বিক্রি হয়। দাম বেশি হওয়ায় আসক্ত শিশুরা কৌটা কিংবা টিউব কেনে না। তারা যার যার প্রয়োজন মতো ইলেক্ট্রনিক রিপেয়ারের দোকান বা জুতা মেরামতকারীদের (মুচি) কাছ থেকে ২০-৩০ টাকার বিনিময়ে অল্প করে সংগ্রহ করে থাকে।
সুমন বললো, প্রথম প্রথম ঘ্রাণটা ভালো না লাগলেও পরে ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। একবার ড্যান্ডির ঘ্রাণ নিলে সারাদিন মাথা ঝিম ঝিম করে, কারও কথা মনে পড়ে না।
ঢাকার গুলিস্তান, খিলগাঁও, কমলাপুর, মালিবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা এলাকা ঘুরে হাবিবের মতো আরও পথশিশুদের এভাবেই নেশা করতে দেখা যায়। পথশিশুদের কেউ কেউ দিনের বেলা নেশা করলেও বেশিরভাগই নেশা করে রাতে। কেউ একা, আবার কেউ কেউ গোল হয়ে বসে সংঘবদ্ধ হয়ে নেশা করে। পলিথিন, প্লাস্টিক ছাড়াও নিজের পরিধেয় জামায় ড্যান্ডি গাম লাগিয়ে নেশা করে তারা। কিছুক্ষণ পর পর ঘ্রাণ নিয়ে নেশায় বুদ হয়ে যায় সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুরা।