||সারাবেলা প্রতিনিধি, ঢাবি ||
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাদ দিলে আবাসিক হলগুলো শূন্য পড়ে আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও টিএসসি’র জমজমাট এবং কোলাহলপূর্ণ আড্ডা থেমে নেই। এ সব কারণে অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, যদি জমজমাট আড্ডা চলতে পারে, তবে পড়াশোনা বন্ধ থাকবে কেন? সুতরাং ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হোক।
সরজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়, রাজু ভাস্কর্য, ডাচ ও এর আশপাশের এলাকায় কয়েক শত মানুষ প্রথাগত সামাজিক দূরত্ব না মেনেই আড্ডায় মেতে আছে। এছাড়াও মধুর ক্যান্টিন, কলা ভবন, মল চত্বর, রেজিস্টার বিল্ডিং ভিসি চত্বর সহ ক্যাম্পাসের কোথাও মহামারির ছাপ নেই।
টিএসসিতে কেউ প্রিয়জনের সাথে ঘুরতে এসেছে; কেউবা বন্ধুদের সাথে চা খাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে। আরো দেখা যায়, তাদের অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। উপস্থিত জনতার হাবভাবে করোনাভাইরাস ও এর সংক্রমণের নিয়ে তিল পরিমাণ ভ্রুক্ষেপ নেই। যদিও কর্তৃপক্ষ টিএসসি’র ভেতরের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে, তবে বাইরের চিত্র প্রায় প্রতিদিনই এরকমই থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ খান আবির প্রায় তিন মাস ধরে ঢাকাতেই অবস্থান করছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অনেকেই ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। তারা নিয়মিত ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করছে। তাদের মতো আমিও প্রতিদিন টিএসসি আসি; সবার সাথে গল্পগুজব করি। টিএসসিতে আগের মতোই আড্ডা, গান চলছে। কোন সমস্যা তো হচ্ছে না।
এদিকে অনেকেই বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করলেও দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকা শিক্ষার্থীরা বিরক্ত হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস খোলা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও পড়াশোনার ঘাটতি পোষাতে খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সময় আর জীবনের যৌক্তিক প্রয়োজনে সকল অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত কার্যক্রম শুরু করার চারমাস পরেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়ে রাষ্ট্রবিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহব্বু মাসুম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি করে নিজের এবং পরিবারের খরচ চালাতো তারা সংকটে পড়েছে, একঘেয়ে রুটিনে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্থিতিশীলতা। তাই পরিস্থিতির অতিরঞ্জন না করে, বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিক, স্বাভাবিক হোক শিক্ষা কার্যক্রম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কেন খোলা চাই তার আগে আমাদের বুঝতে হবে বন্ধ রেখে কি লাভ হচ্ছে ? সামাজিক দূরত্বের কথা বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী তা মানছে না। যেহেতু বাসায় থেকেও কেউ মানছে না সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। একজন বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে একটা বছর বাড়িতে বন্দী রাখার যৌক্তিকতা দেখি না।
ঢাকার অন্যান্য পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে অবস্থান শিথিল করা হয়েছে। সে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্য সম্পাদক এ.এস.এম. রাকিব সিরাজী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার বহিরাগত সারাদিন, সারাক্ষণ অনায়েসে প্রবেশ ও অবস্থান করতে পারলেও নিজের ক্যাম্পাসের নিজের হলে ২০ মিনিটের জন্য প্রবেশ করতে একজন শিক্ষার্থীকে ১০ টা ফর্মালিটিজ ফিলআপ করতে হচ্ছে! মারাত্মক বিপদে পড়ে কোন শিক্ষার্থী ঢাকায় আসলেও অসহায়ের মত বাইরে অবস্থান করতে হচ্ছে! তাই আমি হলে অবস্থানের শিথিলতার কথা বলছি।
তিনি আরো বলেন, হল বা ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার জন্য মানববন্ধন, এগুলো এমনে এমনেই হচ্ছে না! এর পিছনে আমাদের এই দীর্ঘ সময়ের একঘেয়ে অবস্থানের ফলে সৃষ্ট হতাশা, অস্থিরতা একটু হলেও দায়ী।
এ সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রোক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ বজায় রাখতে যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যায় এলাকায় ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ ঘোষণা করেছি। তিনি আরো বলেন, এখানে যারা আসে সবাই শিক্ষিতরা আসে। সুতরাং তাদের প্রতি সুনাগরিক সুলভ আচরণ প্রত্যাশা করেছি।
টিএসসিতে লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরিয়াল টিমকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান এবং ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে বলেন, ওটা একটা জাতীয়ভাবে নেয়া সিদ্ধান্ত। এটা জাতীয়ভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দোষারোপটা যেন কোন প্রতিষ্ঠানের উপরে না পড়ে। এ সময় ঢাবির কলেবর বিবেচনায় সীমিত আকারে ক্যাম্পাস খোলাও সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।করোনা সংক্রমণ রোধে/ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ কিন্তু জমজমাট টিএসসি!