|| সারাবেলা/বিবিসি ||
ভোট নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে গোটা যুক্তরাষ্ট্র। যে কোন উপায়ে জয় পেতে আগে থেকেই বিচারবিভাগসহ রাষ্ট্রের অনেকগুলো মেশিনারিজকে নিজের পক্ষে নিয়ে রেখেছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তারপরও নিজেকে সবকিছুর উর্দ্ধে মনে করা ট্রাম্প শেষ রক্ষা করতে পারলেন না নিজেকে। সকল হিসাব-নিকেশ পাল্টে দিয়ে এবারে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের বাতাসটা লেগেছে ডেমোক্রেটিকদের পালেই। এখন পর্যন্ত ভোটের ফলাফলে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থি জো বাইডেনই হতে যাচ্ছেন মার্কিন অধিশ্বর। তবে এমন ফলাফল কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না খোদ ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে হামলা-মামলা করছেন তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতা। নিউ ইয়র্কে ‘প্রতিটি ভোট গুণতে হবে’ দাবি নিয়ে একটি নির্বাচনি শোভাযাত্রা থেকে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে শিকাগো আর ফিলাডেলফিয়াতেও। এদিকে অ্যারিজোনায় গণনা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। পোর্টল্যান্ড,ওরেগনে প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে ন্যাশনাল গার্ড সক্রিয় হয়।
ওরেগন অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর পোর্টল্যান্ড থেকে ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে আতশবাজি, হাতুড়ি ও একটি রাইফেল উদ্ধার করেছে। পুলিশের দাবি, সেখানে দাঙ্গা বেধেছিল। ওরেগনের গর্ভনর কেট ব্রাউন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রাতেই বিক্ষোভ দমাতে ন্যাশনাল গার্ডকে সক্রিয় করেন।
নিউইয়র্কেও পুলিশ ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার বিকেল থেকেই শহরজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পুলিশ বলছে, বাইডেনপন্থী ও ট্রাম্প–সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বাইডেনের সমর্থকেরা ছোট ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী শোভাযাত্রা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেছেন এবং বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভোট গণনা বন্ধ করতে বলেছেন। বাইডেন বলেছেন, ভোট গণনা শেষ হলে তিনি জয়ের পথেই থাকবেন।
ডেনভারে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো চারজন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেনভারের পুলিশ বিভাগ। মিনেপোলিসের পুলিশও বলছে, রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করায় কয়েকজনকে আটক করেছে তারা।
আটলান্টা, ডেট্রয়েট ও অকল্যান্ডেও নির্বাচনী শোভাযাত্রা শুরু করেছে দুই পক্ষই। পোর্টল্যান্ড পুলিশের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, দাঙ্গার ঘোষণা দেওয়া সমাবেশ থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে কেউ আহত হয়নি। বুধবার সকালে ১০০ জনের বেশি জড়ো হয়ে মিশিগানের ডেট্রয়েটে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁরা পুরোপুরি ভোট গণনার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা স্থানান্তরের দাবি জানান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে আয়োজিত নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে হাজারো মানুষের নির্বাচনি শোভাযাত্রা সহিংস হয়ে ওঠে। অ্যারিজোনার মেরিকোপা কাউন্টির একটি ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে রিপাবলিকান সমর্থক বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেয়ার পর ভোট গণনা বন্ধ করবে নাকি করবে না- এমন দ্বিধায় পড়ে কর্তৃপক্ষ। ট্রাম্পের পক্ষে পড়া ভোট গণনা করা হবে না – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন দাবি ছড়িয়ে পড়ার পর ট্রাম্পের সমর্থকেরা ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেয়। অনেক বিক্ষোভকারী ভোটকেন্দ্রে ঢুকে পড়ার পর তাদেরকে আবার বাইরে বের করে আনা হয়। কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ডাকলেও গণনাকারীরা তাদের গণনা বন্ধ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অ্যারিজনা রাজ্যে জয় তুলে নিয়েছেন জো বাইডেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা ভোট গণনার একটি কেন্দ্রে অস্ত্রসহ উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেন। পোর্টল্যান্ডে প্রতিটি ভোট গণনার দাবিতে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে ন্যাশনাল গার্ড সক্রিয় হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিক্ষোভ থেকে কিছু মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে সিটি সেন্টারে কিছু দোকানের জানালা ভাঙচুর করেছে। একে দাঙ্গা বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
এদিকে মিনিয়াপোলিসে দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী রাস্তা দখল করলে সেখান থেকে কয়েক জনকে আটক করেছে পুলিশ। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো বলছে, বিক্ষোভকারীরা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ভোট বন্ধের আহ্বানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন। ডেট্রয়েটে, ট্রাম্প সমর্থকরা ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হয়ে “ভোট গণনা বন্ধ করো” বলে স্লোগান দিতে থাকে। সেসময় জানালা ভাঙচুর করে তারা। অ্যারিজোনার ফিনিক্সেও একই ধরণের ছোটখাটো বিক্ষোভ হয়েছে।