|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট ||
জয়পুরহাট জেলাকে শতভাগ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহারের আওতায় আনা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হয় ২০১৬ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর। কিন্তু জেলার অনেক গ্রামেই বহু পরিবার এখনো স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার থেকে বঞ্চিত। করোনাকালেও অসচেতন ও দরিদ্র পরিবারগুলো ব্যবহার করছে অনিরাপদ টয়লেট। এতে করে করোনা ভাইরাস সহ নানা রকম সংক্রমণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে অনিরাপদ টয়লেট সরাতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী জয়পুরহাটে মোট জনসংখ্যা ৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৪১ জন ও পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮১। দরিদ্র, অসহায় ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা পরিবারের জন্য ২০০৩ সাল থেকে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায়, উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে, বেসরকারি সংস্থাগুলোর অর্থায়নে জয়পুরহাটে নিরাপদ টয়লেট স্থাপনের কাজ হয়েছে। এ সময়ে জেলায় মোট ২ লাখ ২ হাজার ৭৬৮টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন হয় এবং নিরাপদ শৌচাগার ব্যবহার করছে জয়পুরহাটের ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৮১টি পরিবার। জয়পুরহাট জেলাকে শতভাগ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহারের আওতায় আনা হয়েছে বলে ঘোষণাও দেয়া হয়েছে ২০১৬ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর। যদিও বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

সরেজমিন ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর, কাজীপাড়া, আক্কেলপুরের তিলকপুর পশ্চিম শিয়ালাপাড়া, পালশা, নূরনগরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, অনেক পরিবার স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট পাওয়া যায়নি। পরিবারগুলো এখনো আগের মতোই বাঁশের কঞ্চি, মাটি, বস্তা, পাটের লাকড়ি (শিনট), পলিথিন, বাঁশ ও রিং দিয়ে যত্রতত্র টয়লেট তৈরি ও ব্যবহার করছে। সরকারি-বেসরকারি কোনো পক্ষ থেকে স্যানিটারি ল্যাট্রিন না পাওয়ার কথা জানিয়েছে গ্রামের অনেক পরিবার।
এদিকে অনিরাপদ, অস্বাস্থ্যকর টয়লেট সরানোর জন্য বিভিন্ন দফতরে ধরণা দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর পশ্চিম শিয়ালাপাড়া গ্রামে অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন সরাতে বারবার জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান স্থানীয় অধিবাসী জালাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তার পাশেই বাঁশের কঞ্চি ও মাটি দিয়ে তৈরি টয়লেট রয়েছে যা বর্তমানে অস্বাস্থ্যকর, ব্যবহারের অনুপযোগী ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। এটা অপসারণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি। বরং আমাকে ও আমার পরিবারকে নানা রকম হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় জিডিও করেছি।
এ বিষয়ে তিলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মাহবুব সজল বলেন, পশ্চিম শিয়ালাপাড়া গ্রামের খোলা পায়খানা সরানোর বিষয়টি দীর্ঘদিনের সমস্যা। দুই পক্ষের ৪টি গাছ কাটলেই সমস্যা সমাধান হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইউএনও সাহেব আমাকে বলেছেন।



জানতে চাইলে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম হাবিবুল হাসান বলেন, এরই মধ্যে তদন্তের জন্য কানুনগো সাহেবকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন। থানাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, খোলা পায়খানাগুলোতে হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য পশু-পাখির অবাধ যাতায়াত। এতে মানুষের শরীরে নানা রোগ ছড়াতে পারে। করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে অস্বাস্থ্যকর টয়লেটগুলো দ্রুত ভেঙ্গে ফেলা উচিত।
জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডা. মো. সেলিম মিঞা বলেন, গ্রামের মানুষ অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করলে নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং পানিবাহিত ও খাদ্যবাহিত রোগ বেড়ে যাবে। কমে যাবে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, যক্ষা সংক্রমণ, টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।
যেখানে সেখানে অস্বাস্থ্যকর কাঁচা পায়খানা থাকার পরও শতভাগ স্যানিটেশন কীভাবে নিশ্চিত হয় জানতে চাইলে জয়পুরহাট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এম. এ. আজগর প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সরকারের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। একটি পায়খানা সরানোর জন্য লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।