পরীক্ষা হচ্ছে না এইচএসসিতে

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। অনেকে উচ্ছসিত হলেও কেউ কেউ বলছেন, পরীক্ষা ছাড়া কেবল আগের ফল মূল্যায়নে ফলাফল নির্ধারণ করলে অনেকেরেই ফল খারাপ হবে। কারণ অনেকেই জেএসসি-এসএসসিতে ভালো ফল করতে না পারলেও উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে ভাল করে।

|| আনিসুর রহমান ||

অবশেষে এইচএসসি ও সমমানের চলতি বছরের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালো সরকার। বুধবার ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম জুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

জেএসসি ও এসএসসি এই দুই পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফল বিশ্লেষন করে এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে সংকটের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সংকট হলো যারা ভালো প্র¯‘তি নিয়েছে তাদের নিয়ে। অনেক শিক্ষার্থী এসএসসিতে রেজাল্ট ৪/ ৪.২৫ পয়েন্ট পেয়েছে পরবর্তীতে তারা অনেক ভালো পড়াশোনা করেছে যাতে করে ভালো রেজাল্ট করে মানে ‘এ প¬াস’ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টেস্টেও ৪.৭৫ পেয়েছে কিš‘ যদি গড়ে রেজাল্ট করে তাহলে তো তারা সমস্যায় পড়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরাসহ সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।

মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরীক্ষার্থীদের

সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। অনেকে উচ্ছসিত হলেও কেউ কেউ বলছেন, পরীক্ষা ছাড়া কেবল আগের ফল মূল্যায়নে ফলাফল নির্ধারণ করলে অনেকেরেই ফল খারাপ হবে। কারণ অনেকেই জেএসসি-এসএসসিতে ভালো ফল করতে না পারলেও উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে ভাল করে।

উচ্ছ¡াসিত পরিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ ছয় মাস দ্বিধাদ্ব›েদ্বর পর অবশেষে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসায় তারা অনেকটা ভারমুক্ত। এখন তারা নিজেদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধের জন্য তৈরি করতে পারবেন।

এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইলে সিরাজগঞ্জের ইসলামিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শম্পা আকতার বলেন, গত এপ্রিলে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। তবে পরীক্ষা নিয়ে কোনো ঘোষণা না আসায় দমবন্ধ করা একটা পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম এতদিন। এখন অনেক ভালো লাগছে। সেইসাথে একটু খারাপও লাগছে। কারণ আমার এসএসসির রেজাল্ট খারাপ। এতে করে এইচএসসি’র রেজাল্টও খারাপ হবে।

কিছুটা হতাশ ওই শিক্ষার্থী আরো জানান, অনেক স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়বো, বড় ডাক্তার হবো। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠবে না।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে তৈরি করছিলাম। তবে শিক্ষামন্ত্রীর এমন ঘোষণায় আমি মর্মাহত। কেননা আমার জেএসসির ফল ভালো হলেও এসএসসির ফল খারাপ। পরিবারের স্বপ্ন ছিলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন, কিন্তু সেটা আর সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে আমার বড় চাকরি করার স্বপ্ন ভেস্তে গেল।

লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ সরকারি কলেজের পরিক্ষার্থী রাসেল মিয়া বলেন, আমার জেএসসি ও এসএসসিতে রেজাল্ট খারাপ হয়েছিল। তবে কলেজে ওঠার পর পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছিলাম এবং প্রত্যাশা করেছিলাম ভালো রেজাল্টের। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেস্তে গেল।

রাজধানীর একটি বেসরকারি কলেজের পরিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, আমার জন্য ভালোই হয়েছে। কারণ আমার জেএসসি-এসএসসি পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ায় আমার এইচএসসির রেজাল্টও ভালো হবে। তবে আমার এমন অনেক বন্ধু আছে যাদের জেএসসি-এসএসসির রেজাল্ট ভালো না। তবে তারা উচ্চ মাধ্যমিকে ক্লাসে খুব ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছে। পরীক্ষা হলে তারা ভালো ফল করতে পারত।

এদিকে সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত বলছে, এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তাদের মধ্যে বিগত এইচএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয় এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন। আর দুই বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ২২৪ জন। এক বিষয়েও পাশ করতে পারেননি এমন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৪১ জন।

সার্বিক বিবেচনায় এখন এইচএসসি পরীক্ষা সরাসরি না নিয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে জানিয়ে গেল শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, জেএসসি-এসএসসির রেজাল্ট অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন করা হবে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সেদিন মন্ত্রী বলেন, এ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্যশিক্ষা ব্যুরোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি থাকবে। তারা এ বিষয়ে তাদের মতামত দেবেন। সে অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে দীপু মনি এও বলেছিলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই। এর মধ্যে যথার্থতা বজায় রাখার বিষয়টিও ভাবতে হবে। পরীক্ষা নিতে গেলে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩২ কর্মদিবস দরকার হয়। কোভিড পরিস্থিতিতে এক বেঞ্চে দু’জন বসানো সম্ভব না। সেক্ষেত্রে দ্বিগুন কেন্দ্র প্রয়োজন হবে। প্রশ্নপত্র প্যাকেটজাত করা হয়। নতুন প্যাকেট করারও সুযোগ নেই। এছাড়া কেন্দ্র দ্বিগুন করলে আরও জনবল প্রয়োজন হবে। প্রশাসনসহ সবার জনবল বাড়ানো প্রয়োজন রয়েছে। বিষয় কমানো হয়তো যায়, কিন্তু প্রতিটি বিষয়ের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। অনেকে এতে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করতে পারবে। কোভিড আক্রান্ত হলে তখন কী হবে। এ নিয়ে আমরা চিন্তা করেছি। ভারতের পরীক্ষাও আমরা দেখেছি। তিনটি পরীক্ষা নেয়ার পর তাদের পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। অনেক দেশে পরীক্ষা বাতিল কিংবা স্থগিত করেছে।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা গত ১ এপ্রিল শুর” হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। চলতি বছর ১২ লাখ পরীক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

এর আগে, করোনার কারণে এ বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন