|| বার্তা বিভাগ, সংবাদ সারাবেলা ||
ভারতে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনেলের সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। এতে বড় ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক সংকটে পড়ে বাধ্য হয়েই দেশটি থেকে নিজেদের সকল কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে বিশ্ববাসীর মানবাধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এতে করে সংগঠনটির সব কর্মীকেও হারাতে হয়েছে তাদের জীবিকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া, দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের মতো ঘটনায় মোদী সরকারের সমালোচনা করার জন্যই হয়তো এমন মাসুল গুণতে হলো অ্যামনেস্টিকে।
তবে সরকারসংশ্লিষ্টদের দাবি, ভারতে কোনও সংস্থা যদি বিদেশি অনুদান নিতে চায় তাহলে বিদেশি অনুদান (নিয়ন্ত্রণ)আইনে তালিকাভূক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক। যা করেনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়াও ভারতের আইন মতো কোনও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ চ্যানেলে বিদেশি অর্থ নিতে পারে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, অ্যামনিস্টি এক্ষেত্রেও আইন না মেনে বিদেশি অর্থ নিয়েছে। যে কারণেই অ্যামনেস্টির সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ভারত সরকারের আনা সব অভিযোগ নাকচ করে অ্যামনেস্টি বলছে, ‘‘ভারত সরকারের ক্রমাগত মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে অপদস্থ করার অপচেষ্টার এটা শেষ নিদর্শন। প্রমাণ হয়নি এমন অভিযোগ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতেই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।’’ দেশের সমস্ত আইন কানুন মেনে তাঁরা কাজকর্ম করেন বলেও দাবি করেছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা।
গেল মঙ্গলবার মানবাধিকার এই সংস্থাটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে সরকার। সেটা আমরা জানতে পেরেছি গত ১০ই সেপ্টেম্বর। বাধ্য হয়ে সংস্থার সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে।’’ ভারতের সব কর্মীকেও কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেশটিতে নিজেদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
গত বছরের অগস্টে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছিল উপত্যকায়। মোবাইল, ল্যান্ডলাইন, ইন্টারেন্ট, কেবল টিভি-সহ যাবতীয় পরিষেবা বন্ধ করে রেখেছিল কেন্দ্র। তাতে জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আবার এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের সময়েও একই অবস্থান ছিল সংস্থাটির।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এই সব কারণেই অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ভারত সরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক অবিনাশ কুমার বলেন, ‘‘দু’বছর ধরে ভারতে অ্যামনেস্টির কাজকর্মে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলে আসছে। তাই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা সরকারের দিক থেকে কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সরকারের নানা অনৈতিক ও অমানবিক কাজকর্মের সমালোচনা করার জন্যই ইডি-সহ সরকারের নানা সংস্থার মাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লি সংঘর্ষে, তার আগে জম্মু-কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। অ্যামনেস্টি শুধু অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চারন রেখেছিল। এর জন্য অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের মতো ব্যবস্থা নেওয়া অনুচিত।’’
অ্যামনেস্টির এমন অবস্থানের প্রেক্ষিতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, অলাভজনক সংস্থা হয়েও এফডিআই এর মাধ্যমে বিদেশি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে ২০১৭ সালে অ্যামনেস্টির ভারতে থাকা বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছিল ইডি। আদালতের দ্বারস্থ হয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল সংস্থা। কিন্তু অ্যাকাউন্ট খোলেনি। তার উপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ব্রিটেন থেকে আসা ১০ কোটি এবং ২৬ কোটি টাকার দু’টি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিবিআই। আর সেই মামলার জেরেই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
কিন্তু অ্যামনেস্টির মতো বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য কাজ করিয়ে স্বেচ্ছাভিত্তিক সংগঠনটি ভারত থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিলে বিশ্বজুড়েই এর খারাপ প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।