|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী ||
রাজশাহীতে আট বছরের এক শিশুর নামে শ্রম আদালতে মামলা হয়েছে। কোনো এক শুক্রবার শিশুটির বাবার মালিকানাধীন দোকান খোলা ছিল- এই অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এক পরিদর্শক। একই মামলায় শিশুটির বাবা জনাব আলীকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিশু ও তার বাবা সম্প্রতি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২৪শে মার্চ পবা উপজেলার নওহাটা বাজারের ‘জে বার্মিজ সুজ’ দোকানের মালিক জনাব আলীর কাছে রাজশাহী শ্রম আদালতের দুটি সমন আসে। সেখানে জনাব আলী ও তার আট বছর বয়সী পুত্র জোবায়েরর নামে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ৩০৭ ধারায় অপরাধ করার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। করোনা মহামারী ও লকডাউনের কারনে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে জনাব আলী জানতে পারেন ‘যেকোনো এক শুক্রবার তার দোকান খোলা ছিল তাই গত ১১ই ফ্রেরুয়ারি মামলা করা হয়েছে’। আর দোকানের সাইনবোর্ডে জনাব আলীর ছেলের ছবি ও নাম থাকায় তাকেও মামলায় আসামী করা হয়েছে।
শিশুটির বাবা জনাব আলী বলেন, শুক্রবারের দিন দোকান খোলার অপরাধে যদি মামলা হয় তাহলে আমার নামে হবে। আমার শিশু সন্তানের নামে কেন? দোষ করলে আমি করেছি। দোকানের সাইনবোর্ডে ছেলের ছবি ও নাম থাকায় কি অপরাধ?
নওহাটা বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ে না গিয়েই এমন ভুলভাল রিপোর্ট তৈরী করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক। ছোট-খাটো নানা অপরাধে বাজারের ৩০-৪০ জন দোকান মালিকের নামে মামলা হয়েছে বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে শ্রম আদালতের আইনজীবী এস. আলম বলেন, ‘যেহেতু শিশু জোবায়ের দোকানের মালিক বা পরিচালক কোনটিই নয়, তাই শুধু সাইনবোর্ডে ছবি ও নাম থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে না।’
জানতে চাইলে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপ-মহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভুইয়া বলেন, ‘এটি সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকের ভুল। শিশুটির মামলা প্রত্যাহরের বিষয়ে আমরা আন্তরিক। শিশুর পরিবার যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতো তাহলে এটা ঘটতো না। আর ঘটনার পরও যদি যোগাযোগ করতো তাহলে আরজি পরিবর্তন করে শিশুটির নাম বাদ দেওয়া যেত। এখন আমরা আরজি থেকে শিশুর নাম বাদ দিয়ে দেব।’
তবে এখন মামলার আরজি থেকে নাম বাদ দিলেও শিশুটির ওপর এরইমধ্যে যে ক্রিমিনাল অফেন্স চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তার দায় কে নেবে- প্রশ্ন তুলেছেন রাজশাহী জজকোর্টের আইনজীবী দিল সেতারা। তিনি বলেন, ‘১১ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর নামে মামলা হওয়ার আইন নেই। শ্রম আইন অনুযায়ীও ১১ বছরের নিচে কোনো শিশু অপরাধ করলে তার নামে মামলা দায়েরের সুযোগ নেই। এখন যদি আরজি থেকে শিশুটির নাম বাদও দেওয়া হয় তবুও তার ওপর যে ক্রিমিনাল অফেন্স চাপিয়ে দেওয়া হলো তার দায় কে নেবে? তাকে তো বড় হওয়ার পর নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হবে।’