|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী ||
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের একাংশের উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ডাকা গণশুনানিতে অংশ নেননি রাবি উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া।
এ বিষয়ে ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘শুনানিতে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান উপস্থিত হননি। আর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া শারীরিক অসুস্থতার কারণে থাকতে পারবেন না বলে আগে থেকেই জানিয়েছিলেন। শুনানির নির্ধারিত সময়ে আমরা বসেছিলাম। আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এখনই কিছু বলা যাবে না।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৪ঠা জানুয়ারি (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সংবলিত তিনশ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ইউজিসি’র কাছে জমা দেয় ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের একাংশ। সেখানে রাষ্ট্রপতিকে ধোঁকার অভিযোগ, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য, অ্যাডহক ও মাস্টাররোলে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, ভিসি’র বাড়ি ভাড়া নিয়ে দুর্নীতিসহ ১৭টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগগুলোর বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্য অধ্যাপক সোবহানকে করোনার কারণে ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নিতে অনুরোধ করেছিল ইউজিসি। কিন্তু অধ্যাপক সোবহান সামনা-সামানি কথা বলার প্রস্তাব করলে গণশুনানির আয়োজন করে ইউজিসি। বৃহস্পতিবার অভিযোগকারী শিক্ষকদের নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষকরা তাদের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য ও প্রমাণাদি পেশ করেন।
এদিকে রাবি উপাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) গণশুনানির আয়োজন পক্ষপাতিত্বমূলক বলে অভিযোগ করেন। গণশুনানিতে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে গত ৯ই সেপ্টেম্বর তিনি ইউজিসিকে চিঠি দেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর লেখা ওই চিঠিতে উপাচার্য তদন্ত কমিটির কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ জানান। তিনি গণশুনানিকে ইউজিসির কর্তৃত্ব বহির্ভূত, আদালত অবমাননাকর এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার জন্য বারবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে গণশুনানীর আগে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে কর্তৃত্ববিহীন তদন্ত কমিটির তদন্ত বন্ধ করতে অনুরোধ করেছি। কারণ ইউজিসির তদন্ত কমিটি গঠন করার এখতিয়ার নাই। কমিটি গঠনে কমিশনের যে অ্যাক্ট আছে সেই অ্যাক্টে এই ক্ষমতা নাই। তাছাড়া তদন্ত কমিটি গঠন করতে হলে উপাচার্যের মর্যাদার একধাপ উপরের পদমর্যাদার সদস্যদের দিয়ে করতে হবে।
তিনি বলেন, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ১১ ধারা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি তথা আচার্য কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত তাই শুধুমাত্র নিয়োগকর্তা দ্বারা সম্পন্ন করা আইনসিদ্ধ। কিন্তু আইন বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক একজন সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও উপাচার্যের সমমর্যাদা সম্পন্ন দুইজন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি কর্তৃক তদন্তকার্য পরিচালনা শুধু বেআইনিই নয় বরং এর মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকেও খর্ব করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন। এই এ্যাক্টের ১২ ধারায় ১০টি অনুচ্ছেদ-এ (আরইউ ক্যালেন্ডার ভলিয়ম-১, পেজ-৭-৯) উপাচার্যের ক্ষমতা ও কর্তব্য বর্ণিত আছে। উপাচার্যের সিদ্ধান্তে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে উক্ত এ্যাক্ট এর ৫১(১) ধারা (আরইউ ক্যালেন্ডার ভলিয়াম-১, পেজ-২৬) মোতাবেক সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার চেয়ে আচার্য বরাবরে আবেদন করতে পারেন। অত্র এ্যাক্ট অনুযায়ী এই ক্ষমতা শুধুমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি তথা আচার্যকেই প্রদান করা হয়েছে।’যেহেতু ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটিতে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
অন্যদিকে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে শুনানিতে থাকতে পারবেন না বলে ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগে থেকেই জানিয়েছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া। এ বিষয়ে উপ-উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন করে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।