|| বার্তা সারাবেলা (বিবিসি) ||
বৈরুত বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অবহেলাকে দায়ী করে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশটির সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈরুত বন্দরের কাছের একটি নাইট্রেটবোঝাই গুদামে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৩৫ জন মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে চার হাজারের বেশী মানুষ। যাদের চলছে চিকিৎসা।
এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী সন্দেহে বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। চলছে বিস্ফোরণের কারণ খুঁজতে তদন্ত। লেবানিজ চলচ্চিত্রকার জুড চেহাবের কথায়, ”বৈরুত কাঁদছে, বৈরুত চিৎকার করছে, মানুষ এখন উদভ্রান্ত ও ক্লান্ত।”

বিস্ফোরণের পর পর সারাদেশে দুই সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের জন্য সরকারকেই দায়ী করে এর বিচার চাইছেন বৈরুতের সংক্ষুব্ধ মানুষ।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বৈরুতের অধিবাসী চাদিয়া এলউচি। ক্ষোভে সংক্ষোভে বললেন, ”আমি সবসময়ই জানতাম কতগুলো অযোগ্য লোক আর অযোগ্য সরকার এই দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই এখন তারা যেটা করেছে সেটা ভয়ংকর অপরাধ।”
বুধবার মন্ত্রিপরিষদের এক জরুরি বৈঠকে লেবাননের প্রেসিডেন্ট বলেন, “বিস্ফোরণের কারণে বৈরুত শহরে যে আতঙ্ক নেমে এসেছিল সেটি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। পুরো শহর দুর্যোগ কবলিত হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় গুদামে রাখা ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ব্রিটেনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা শহরে যে পারমানবিক বোমা ফেলা হয়েছিল, সেটির দশভাগের এক ভাগ শক্তি ছিল বৈরুত বিস্ফোরণে। তারা বলছেন, বৈরুতের এই বিস্ফোরণ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পারমানবিক-বহির্ভূত বিস্ফোরণ।



কৃষিকাজের জন্য সার এবং বিস্ফোরক বানানোর কাঁচামাল এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামটিতে ছয় বছর ধরে অনিরাপদ অবস্থায় পড়েছিল। এই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ২০১৩ সালে একটি জাহাজে করে বৈরুত বন্দরে এসেছিল।
বৈরুত বন্দরের প্রধান এবং কাস্টমস প্রধান স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা জানতেন যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিপজ্জনক এবং বন্দরের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেখানে রাখা রাসায়রিক পদার্থ রপ্তানি কিংবা বিক্রি করে দেবার জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে একাধিকবার চিঠি লেখা হয়েছিল। কাস্টমস প্রধান বাদরি দাহের এও বলেছেন, এসব রাসায়নিক পদার্থ সেখান থেকে সরিয়ে নেবার জন্য বারবার তারা তাগিদ দিলেও তাতে কোন কাজ হয়নি।
৩ লাখ মানুষ গৃহহীন খাদ্যমজুদে চলবে মাসখানেক
লেবাননের রাজধানী বৈরুতকে তছনছ করে দেওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতের পাশাপাশি প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহরটির গভর্নর মারওয়ান আবুদ।
মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণে বৈরুত শহরের অর্ধেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে আটকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা মারওয়ানের।
বিস্ফোরণে লেবাননের মজুদ খাদ্যশস্যের ৮৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে বুধবার জানা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি আমদানি করা খাদ্যশস্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
খাদ্যশস্যের এখন যা মজুদ আছে তা দিয়ে দেশটি বড় জোর আর এক মাস চলতে পারবে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সংবাদ সূত্র : বিবিসি ও গার্ডিয়ান