সাতই মার্চের ভাষণ আর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা দুটোই ইতিহাস

দুর্ভাগ্য আমাদের, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই।

বললেন মির্জা ফখরুল

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটন করবার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইতিহাসের নায়কদের কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই এবং আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিতও না।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একাত্তরের ৭ই মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস। একইসঙ্গে জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষনাও ইতিহাস। আমরা শুধু ৭ই মার্চ নয়, ২রা মার্চ,  ৩রা মার্চ পালন করছি। ২রা মার্চ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আ স ম আবদুর রব। এটা স্বাধীনতার ইতিহাসের অংশ। ৩রা তারিখ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাজাহান সিরাজ। এটাকে অস্বীকার করব কী করে?’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি উপলক্ষে শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি মিলনায়তনে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঠিক একইভাবে ৭ই মার্চ যে ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমানের, সেটা অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তাঁর মর্যাদা তাঁকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে আপনি যখন ৭ই মার্চ পালন করবেন, তখন বলবেন ৭ই মার্চের ডাকে সব হয়ে গিয়েছিল। সেটা কি না, তা আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে। কে বক্তৃতাতে ৭ই মার্চে কী বলেছিলেন, পরবর্তীকালে ২রা মার্চে কী বলেছিলেন, ৩রা মার্চে কী বলেছিলেন, ৯ই মার্চ মাওলানা ভাসানী কী বলেছিলেন পল্টন ময়দানে—এগুলো ইতিহাস। একই সঙ্গে ২৬শে মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনোটাই অস্বীকার করা যাবে না।’

জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকেই তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রশ্ন রাখেন, ‘ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল যে আমি গণতন্ত্র লুট করে নেব, আমি আগের রাত্রে নির্বাচন করে সরকার লুট করব, আমি কোষাগার খালি করে দেব। একজন লেখক, একজন নিরীহ মানুষ তিনি লেখেন, সেই অপরাধে তাঁকে জেলে পাঠিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে।’​

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে যে ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে, তার সবচেয়ে বেশি শিকার সাংবাদিকেরা। প্রায় ৪০০ জন বিভিন্নভাবে শিকার হয়েছেন এই আইনে, কতজনকে জেল খাটতে হয়েছে। এ জন্য তো আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করিনি, এ জন্য তো আমরা স্বাধীনতা চাইনি। আমরা কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটা পরিবার, কোনো একটা দলের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক সম্পত্তি করার জন্য এ দেশ স্বাধীন করিনি।’

এসময়ে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জিয়াউর রহমান প্রথম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম সম্মুখযুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনিই প্রথম সেক্টর কমান্ডার, প্রথম জেড ফোর্সের অধিনায়ক। অত্যন্ত বেদনাদায়ক গত ১২ বছর ধরে দেখছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করার জন্য হেন কোনো চেষ্টা নেই, তা করা হচ্ছে না। সর্বশেষ তাঁর খেতাব বাতিলের জন্য আজকে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক।’

জিয়াউর রহমানের যুদ্ধখেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। কে কার খেতাব নিল, না নিল তাতে জিয়াউর রহমানের কিচ্ছু যায় আসে না। এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরও কিছু যায় আসে না, বিএনপিরও কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব কারও দয়ায় নয় বা কোনো সরকারের বা কোনো ব্যক্তির আনুকূল্যে নয়। তিনি এটা অর্জন করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন জিয়াউর রহমান। এর পরে যিনি চেয়ারপারসন হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া, তিনিও স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন অংশগ্রহণকারী ও নির্যাতিত এক নেত্রী। তিনি কারাবরণ করেছেন একাত্তর সালে এবং আজকেও তিনি যে লড়াইটা করছেন, এখনো কারাবন্দী আছেন। তাঁর একটা মাত্র লক্ষ্য গণতন্ত্রকে মুক্ত করা।’

এই সময়ে যখন দেশে গণতন্ত্র নেই,  খালেদা জিয়া কারাগারে, যখন আপনাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না, এমন পরিস্থিতিতে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান কেন করছেন। এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তী করছি কার? স্বাধীনতার। এটা আমার, এ দেশের মানুষের। এটা বাস্তবতা। এটা স্বপ্ন আমার, এটা আমার সবকিছু। আমি স্বাধীনভাবে একটা জাতিকে নির্মাণ করতে চাই। কে কী করল না করল বড় কথা নয়। এটা আমার অধিকার, আমি এই স্বাধীনতার ৫০ বছর অবশ্যই পালন করব।’

মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সংবাদ সারাদিন