|| সারাবেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম উত্তর ||
চলতি মাসের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ৫ম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার নির্বাচন। আসন্ন এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররা। প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভায় মেয়র পদে গতবারের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান মেয়র আলহাজ্ব শাহাজাহান শিকদার (নৌকা) ও বিএনপির মনোনীত মো. হেলাল উদ্দিন শাহ (ধানের শীষ) প্রতীকে এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা পৌরসভার উন্নয়ন, নাগরিক অধিকার নিশ্চিত এবং পৌরবাসীর দুঃখ-দুর্দশায় পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি নিজেদের ব্যক্তিগত ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পৌর এলাকায় এখন নির্বাচনী হওয়া বাইছে। প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণ, পোস্টার সাঁটিয়ে, ব্যানার টানিয়ে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠে নিজেদের প্রার্থী হওয়ার খবর জানাচ্ছেন। প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলাচ্ছেন জোর প্রচার-প্রচারণা। পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানও চলছে নির্বাচনী আলোচনা। পৌর এলাকা জুড়ে ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের ব্যানার আর পোস্টারে।
ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের
প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচার প্রচারণায় দম ফেলবার সময় না পেলেও ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার জানান, সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। তবে এ সরকারের উচিত স্থানীয় নির্বাচন গুলোতে দলীয় প্রতীক না রেখে ভোট দেয়ার সুযোগ করে দেয়া। তাহলে আমরা পৌরসভার উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিদেরকেই পৌর পিতা নির্বাচিত করতে পারতাম।
এদিকে আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি ভোট উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব শাহাজাহান শিকদার। নির্বাচনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস। অপরদিকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা, প্রাণ নাশের হুমকিসহ পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী। হুমকির কারণে গত দুই দিন প্রচারণা বন্ধ রেখেছেন বলেও দাবি করেছেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মোঃ হেলাল উদ্দিন শাহ। প্রতিকার চেয়ে ১৫ই ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে হেলাল উদ্দিন শাহ উল্লেখ করেন, মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমথর্করা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। পৌর এলাকায় ভোটের প্রচার- প্রচারণা চালাতে গেলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর লোকেরা তাঁকে ও তাঁর কর্মীদের বাধা দেন। ইছাখালীর ২নং ৩ নং ওয়ার্ডসহ কয়েকটি এলাকায় তাঁর টাঙানো সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন।
বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হেলাল উদ্দিন শাহ বলেন, ‘তাঁর কর্মীদের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। এ জন্য গত দুই দিন প্রচারণা বন্ধ রেখেছি। পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঝুলানো তাঁর পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ করার পরও কোন প্রতিকার পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে তিনি যথেষ্ট সন্দিহান। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও সিইসির কাছে দাবি জানাই।’ দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য পৌরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব শাহাজাহান শিকদার বলেন, ‘বিএনপি নিজেরাই পোস্টার ছিঁড়ার ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচনের পরিবেশকে ভিন্নখাতে চালানোর চেষ্টা করছেন।’
হুমকি প্রসঙ্গে শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘নির্বাচন এলেই তারা মিথ্যাচার করে। এটি বিএনপির পুরনো অভ্যাস। আমরা তাদের প্রচার-প্রচারণায় বা তার সমর্থকদের কোনো ধরনের বাধা, হুমকি-ধামকি দিচ্ছি না। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাসুদুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য সার্বিক কার্যক্রম চলমান আছে।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অরুণ উদয় ত্রিপুরা জানান, রাঙ্গুনিয়া পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ২ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন আর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২৫ হাজার ৭৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৩ হাজার ৫১৯ জন আর নারী ভোটার ১২ হাজার ২৭২ জন।