বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া সবকিছু ধরে রাখার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির জন্য যা করে দিয়ে গেছেন, সেসবকিছু ধরে রাখার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বললেন, ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য ছিল না, এটি ছিল বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার সংগ্রাম। তাই বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির জন্য যা করে দিয়ে গেছেন, সেসবকিছু ধরে রাখার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বললেন, ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য ছিল না, এটি ছিল বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার সংগ্রাম। তাই বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখার কোন বিকল্প নেই।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে। সেই সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে।”

ছবি: পিআইডি

ভারতবর্ষ ভাগের পর নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে বাঙালির ভাষার ওপর আঘাত আসার ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানি শাসকরা আঘাত হেনেছিল আমাদের সংস্কৃতির উপর, ভাষার উপর। এর প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। যখন পাকিস্তানিরা সিদ্ধান্ত নেয় যে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হবে, তখনই তার প্রতিবাদ শুরু করেন। শুধু প্রতিবাদই নয়, ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে অন্যান্য দলকে সাথে নিয়ে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। আর সেই সংগ্রাম করতে গিয়ে সেই পাকিস্তান আমলে, একটি রাষ্ট্র হওয়ার বছরও পার করেনি তখন তিনি বারবার কারাবরণ করেন।”

১৯৭১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর বঙ্গবন্ধু সেখানে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেখান থেকে উদ্ধৃত করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার। এ কথার মধ্য দিয়েই কিন্তু আমরা অন্তত এইটুকু শিক্ষা নিতে পারি যে এই ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষা রক্ষার আন্দোলন না। এই আন্দোলন আমাদের সার্বিক বাঙালি জাতি হিসেবে অর্জনের আন্দোলন। এবং তিনি সেটা আমাদের করে দিয়ে গেছেন। এটাকে ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।”

ছবি: পিআইডি

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা সভায় তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসেছিল, তারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা না ভেবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতাকে আমাদের অর্থবহ করতে হবে। এই স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।”

তিনি জানান, দেশের মানুষের জীবনকে অর্থবহ ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের গৃহহীন মানুষদের ঘর করে দেওয়ার পাশপাশি দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজও শুরু করেছে তার সরকার।  

ছবি: পিআইডি

করোনাভাইরাস মহামারীর থেকে দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা এবং দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “করোনাভাইরাসে, আমি বলব, আপনারা সবাই টিকা নেবেন। কিন্তু টিকা নিলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে। এটা কিন্তু মেনে চলতে হবে।”

অনেক দেশ টিকা সংগ্রহ করতে না পারলেও বাংলাদেশ সরকার আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় বাংলাদেশ টিকা পেয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “সাথে সাথে সবাইকে সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থাও রাখতে হবে, এটা এই কারণে যে এটার কার্যকারিতা কতটুকু,  তা গবেষণার পর্যায়েই আছে। তবুও অন্তত মানুষকে সুরক্ষা দিচ্ছে। নিজেকে আরো সুরক্ষিত করতে হবে, এই কারণে দ্বিতীয় ডোজও দিতে হবে।”

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দলের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সারাদিন