ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলদাবিতে বাড়ছে সোচ্চারন

আমরা সংস্কার মানিনা। আমরা এই কালো আইন সম্পূর্ণ বাতিল চাই। এই কালোআইন বহাল রেখে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ন জয়ন্তী পালনকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেইমানী করার সামিল।

২৬শে মার্চ পর্যন্ত সময় দিল নাগরিকরা

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল দাবিতে সোচ্চারন জানানো হলো নাগরিক সমাবেশ থেকে। বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কারে সরকারের প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমরা সংস্কার মানিনা। আমরা এই কালো আইন সম্পূর্ণ বাতিল চাই।” এই কালোআইন বহাল রেখে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ন জয়ন্তী পালনকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেইমানী করার সামিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ূম, রাখাল রাহা, ও দিদারুল ভূঁইয়া; ছাত্র-যুব-শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন, ফারুক হাসান, ফরিদুল হক, ইমরান ইমন; নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের মোস্তাক হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতির (বেলা) নির্বাহি পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর সহ অনেকেই সমাবেশে বক্তৃতা করে। বক্তারা সবাই এই কালো আইন বাতিল দাবিতে নিজ নিজ সোচ্চারন জানান।  

ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, “আমাদের পুলিশের সঙ্গে কোনো শত্রুতা নাই। আমাদের আন্দোলন জনগনের জন্য। পুলিশ, প্রশাসন জনগণেরই অংশ। আমরা জানি এ রাষ্ট্রে সবাই নির্যাতিত হোন কোনো না কোনো ভাবে। আমরা একটা মানবিক রাষ্ট্র গড়তে না পারলে কোনো শ্রেণী পেশার মানুষের যে মুক্তি নাই, এটা আমাদের প্রশাসন, পুলিশ সবাইকে বুঝতে হবে। আমরা মনে করি আমাদের বাঁধা না দিয়ে বরং পুলিশের উচিৎ আমাদের নিরাপত্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া।  গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “সকল কালো আইনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। এ আন্দোলন রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রুপান্তরের মধ্য দিয়েই চুড়ান্ত পরিনতি লাভ করবে।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ভোটারবিহীন এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, “এ রাষ্ট্র এমনি নির্লজ্জ্ব, এতো প্রতিবাদের পরও তারা আইনটা বাতিল না করে সংস্কারের কথা বলছে। তারা দেশের মালিক জনগনকে এতোই অবজ্ঞা করে যে, কালো এই আইনের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছে, মুশতাকের খুনের যারা বিচার চাইছে, তাদের ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যেই তাদেরকে একই আইনে মামলা দিয়ে জেলে পাঠাচ্ছে। এখন আবার জামিনে মুক্ত দিদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য, তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেবার জন্য আদালতে আবেদন করেছে।” তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, “এসব বন্ধ করেন। জনবিক্ষোভের মুখে পালাবার পথ পাবেন না।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

নাগরিক সমাবেশ শেষে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শহিদুল আলম, ও রেহনুমা আহমেদের নেতৃত্বে উপস্থিত নাগরিকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে। পদযাত্রাটি শেরাটন হোটেল এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ বাঁধা দেয়। সেখানে কিছুক্ষন অবস্থান করে আবারো বক্তব্য দেন নেতৃবৃন্দ। সেখানে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা পুলিশের অনুরোধে এখানেই পদযাত্রা শেষ করছি। কিন্তু যদি ২৬শে মার্চের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা না হয়, তাহলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবো। সেদিন কোনো অনুরোধ, কোনো বাঁধা আমাদের আটকাতে পারবেনা।

সমাবেশে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনানো হয়।

সংবাদ সারাদিন