|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
শেষরক্ষা হলো না সরকারি ক্ষমতার পাদপ্রদীপে থাকা ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের। নিজের ব্যবসায়িক আর ব্যক্তিগত প্রভাবে গেলো কয়েক বছরে হেলেনা জাহাঙ্গীর হয়ে ওঠেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক। ব্যবসায়িক গ্রুপ জয়যাত্রার কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।
ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে গড়ে তোলেন জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠান করেন ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন (আইপি টিভি) জয়যাত্রা। এই টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন। হেলেনা এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কুমিল্লায় আব্দুল মতিন খসরুর আসনে উপনির্বাচনেও প্রার্থী হতেও চেয়েছিলেন তিনি। তবে কোনোবারই তিনি দলের মনোনয়ন পাননি।
এতো সবকিছুর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তিনি নির্বাচিত হন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি। যাকে খোদ আওয়ামী লীগসংই কেই ‘ভুঁইফোড়’ হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে এই সংগঠনটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোন ধরনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করবার পরই তাকে অব্যাহতি দেয়ার আওয়ামী লীগ থেকে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পরবার পরই গেলো বৃহস্পতিবার রাতে আলোচিত এই রাজনীতিক ও ব্যবসায়ির গুলশানের বাসায় অভিযানে নামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব। বেশ কয়েক ঘন্টা অভিযানে তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, ওয়াকিটকি সেট, বিদেশি মুদ্রা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া পাওয়া যায়। এসময়ে তাকে আটক করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে পদ হারানো ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করার পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিরপুরে জয়যাত্রা টিভি কার্যালয় ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে থাকা একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, ওই আইপিটিভি চালানোর জন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র অভিযানে পাওয়া যায়নি। মিরপুর-১১ নম্বরের এ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে জয়যাত্রা টিভি কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এই অভিযান চালানো হয় বলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক ইমরান হোসাইন জানান।
সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরের ঢাকার গুলশানের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অভিযান শুরু করে র্যাব। পরে মধ্যরাতে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, “তাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” আটকের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তার বাসায় মদ, হরিণের চামড়া, ক্যাসিনো বোর্ড, ওয়াকিটকিসহ বেশ কিছু অবৈধ সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।”
রাত সোয়া ১২টার দিকে পাঁচ তলা ওই বাড়িতে নিজের ফ্ল্যাট থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীর যখন র্যাব সদস্যদের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন, তার মুখে ছিল মাস্ক। পরনে ছিল বেগুনি রঙের জামা ও হলুদ ওড়না।
তিনি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দুবার হাত নাড়েন। এসময় তিনি কিছু বলতে চাইলেও সেই সুযোগ পাননি। র্যাব সদস্যরা তাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
এসময় একটি ট্রেতে করে কিছু ছুরি এবং লাল একটি লাগেজও র্যাব সদস্যদের নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এরপর র্যাবের নির্বাহী হাকিম পলাশ কুমার বসু ওই বাড়ির নিচতলায় সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছিলেন তারা। অভিযানে ওই বাসা থেকে বিদেশি মদ, ওয়াকিটকি সেট, বিদেশি মুদ্রা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া জব্দ করার কথা বলেন তিনি।
পলাশ বসু বলেন, “জব্দকৃত আলামত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।”
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক আপনাদের (সাংবাদিক) অতি শীঘ্র বিস্তারিত ইনফর্ম করব।”
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে র্যাবের হাকিম বলেন, “র্যাব সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।”
সংবাদসূত্র: বিডিনিউজ২৪.কম