|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ||
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে চলছে প্রতিবাদী সোচ্চারণ। শুক্রবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ হচ্ছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে।
রাষ্ট্রিয় হেফাজতে এমন মৃত্যু মেনে নিতে না পারা মানুষগুলো এবং বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করছেন। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
শুক্রবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শাহবাগ ও পরীবাগ মোড় ঘুরে শাহবাগে ফিরে আসে। পরে তাঁরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে বিক্ষোভ চলছিল।
এতে চারদিকের যান চলাচল অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ভোগান্তি অনেকটা কম।
বিক্ষোভে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন। তিনি অভিযোগ করেন, গত বছরের এপ্রিলে লেখনীর মাধ্যমে দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন লেখক মুশতাক। তাঁর অপরাধ ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। কারাগারে আটকে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করলেও তা নির্বিকারভাবে নাকচ করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুকে তাঁরা নির্মম রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড বলছেন।
নাসির উদ্দীন আরও বলেন, দেশে আজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালা কানুনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে সরকার।
অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করলে আরো বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেয়া হচ্ছে এই বিক্ষোভ থেকে।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, লেখক মুশতাক নয় মাস ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন। মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করার জায়গায় চলে গেছে বর্তমান সরকার।
বিক্ষোভে আরও বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রাজেন্দ্র চাকমা প্রমুখ।
৫৩ বছর বয়সী লেখক মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের ভেতরে মারা যান। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, মুশতাক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
গত বছরের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনে নিয়োজিত রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে র্যাব গ্রেফতার করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাঁরাসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়।