|| খায়রুল ইসলাম সাব্বির, হবিগঞ্জ থেকে ||
দিন দিন বাড়ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আর সেইসঙ্গে কোভিডে মৃতের সংখ্য। সারা দেশ যখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত তখন না খেয়ে অনাহারে দিন পার করতে হচ্ছে কম আয়ের মানুষেদের। আগের মতো নেই আয় রোজগার। এরই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে নতুন করে ‘কঠোর লকডাউন’।
বুধবার ১৪ই এপ্রিল থেকে সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লাকডাউন’ চলছে সারাদেশে। এরই মধ্যে শুর হয়েছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। এমনিতেই রোজায় পণ্যমূল্য থাকে বাড়তি, তারওপর আবার লকডাউন। কম আয়ের মানুষদের জন্য এ যেনো ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’।
যারা দিন আনে দিন আনে দিনে খায় তারা কীভাবে খাবার তুলে দেবেন পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখে। এই কঠিন লকডাউনে কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন তারা।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার ১৩ই এপ্রিল দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের কয়েকটি এলাকায় এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে বেশ কয়েকজন নিম্ন আয়ের মানুষের সাথে। তাদের মুখ থেকে শোনা গেছে খাবার যোগাড় করার কষ্ট, আবার কয়েক জনের সাথে কথা বললে অনেকের চোখে ছিল কষ্টের অশ্রু, আবার অনেকেই বসে আছেন মাথায় হাত দিয়ে।
এদিকে হবিগঞ্জের কয়েকটি মাছ ও সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায় লকডাউন এবং রমজান মাসের পণ্যসামগ্রী কিনতে ভীড় উপচে পড়ছে। ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেনি পেশার মানুষ রোজকার চেয়ে অনেক বেশী পণ্যসামগ্রী কিনতে ব্যস্ত।
কিন্তু লকডাউন আর রোজা দুই মিলিয়ে লাগামহীন হয়েছে মাছ ও সবজির বাজার। কোন কিছুই সাধ্যের মধ্যে নেই সাধারণ মানুষের। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে না প্রশাসন। অসহায় মানুষের দূর্বলতার সুযোগে লুটেপুটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সব কিছুর হিসাব ঠিক আছে। তবে ভ্যান চালক, রিকশা চালক, টমটম চালক, কৃষক, শ্রমিকদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষেরা কীভাবে পার করবেন এই রোজার মাস। এর মধ্যেই কঠোর লকডাউন। সবমিলিয়ে মাথায় হাত অনেকের, কীভাবেই এই কঠিন লকডাউনে পুরো মাসের খাবার সংগ্রহ করবেন তারা। তাদের মুখে স্বভাবসুলভ হাসি থাকলেও চোখে পানি দেখা গেছে অনেকের।
লকডাউনের পরিস্থিতি নিয়ে ছোট বহুলা গ্রামের রিকশা চালক মতিন মিয়া বললেন, ‘কী কইমু কষ্টের কথা, কয়দিন পরে পরেই লকডাউন শুরু হয়। আমরা গরীব অসহায়রা কীভাবে খাইমু সে কথা কী সরকার বুঝে। সরকার আমাদের সাহায্য করলেও সব নাই করে দেয় চেয়ারম্যান, মেম্বারে। করোনা কিতা ভাই খাওনের কষ্ট থাকি বড় করোনা আর কিছু দেখিনা চোখে। সারাদিন পেডেল মাইরা রোজি করি ৩০০ টাকা। লকডাউনে কীভাবে রিকশার পেডেল ঘুরবো কীভাবে খামু তা আমার আল্লাহই ভালো জানেন।’
এ বিষয় নিয়ে কথা হয় কটিয়াদির গ্রামের একজন টমটম চালক শানু মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘ভাই সরকারের কাছে তো আমরা তেল, চাউল, ডাল, চিনি চাইনা শুধু কিছু সুযোগ চাই আমারা যাতে জীবিকা নির্বাহ করে চলতে পারি। কল-কারখানা, বড় বড় কোম্পানি সব কিছু চালু থাকেবে, তাহলে আমাদের টমটম চলবেনা কেন? গ্যারেজ ভাড়া, মালিক খরচ সব কিছু দিয়ে আমার হাতে দিনে থাকে ৪০০ টাকা। এখন চলতে পারি ভাই। লকডাউনে কেমনে চলমো। সরকার আমাদের গরীব দুঃখী মানুষদের অনুদান দিবে আর সব কিছু চলে যাবে চেয়ারম্যান, মেম্বারদের ঘরে। আমার ঘরেতো কিছু আসবেনা ভাই।’
ধুলিয়াখাল গ্রামের বাসিন্দা ভ্যান চালক মো. নানু মিয়া বললেন, ‘লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকবে ভ্যান চালানো বন্ধ হয়ে যাবে, পরিবার চালানো খুব কষ্ট হয়ে যাবে আল্লাহই ভাল বলতে পারেন কীভাবে চলবো আমরা।