বাইশ বছরেও ময়লার ভাগাড় গড়তে পারেনি শ্রীপুর পৌরসভা

গেলো বাইশ বছরেও ময়লা ফেলার নির্দিস্ট জায়গা গড়তে পারেনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। যে কারণে বহু বছর ধরেই পুরো শহর হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। নষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিক সুস্থ পরিবেশ। পঁচা দূর্গন্ধে প্রতিনিয়তই হচ্ছে বায়ুদূষণ, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন পৌরবাসী।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর ||

গেলো বাইশ বছরেও ময়লা ফেলার নির্দিস্ট জায়গা গড়তে পারেনি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। যে কারণে বহু বছর ধরেই পুরো শহর হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। নষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিক সুস্থ পরিবেশ। পঁচা দূর্গন্ধে প্রতিনিয়তই হচ্ছে বায়ুদূষণ, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন পৌরবাসী। শিল্প এলাকার প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভায় ২২ বছরেও বর্জ্যব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় ক্ষুব্ধ পৌরবাসী। 

bty

পৌরবাসীর অভিযোগ, শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও চরম উদাসীনতার কারণে ময়লা-আবর্জনার স্তপে ভরা প্রাণকেন্দ্র মাওনা চৌরাস্তা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকা। ময়লা-আবর্জনা দিনের পর দিন স্তুপ আকারে জমা থাকে সড়কের পাশে-গলি পথে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বাজারের ব্যবসায়ী, পথচারী, বাসাবাড়ির লোকজন এবং মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণকে। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাতের আঁধারে সড়কের পাশের ফাঁকা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে চলে যায়। এসব নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী জনগণ। পৌর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা সমধানে পৌর মেয়রের তড়িৎ পদক্ষেপ চাইছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের মাওনা চৌরাস্তায় মহাসড়কের পাশে, গলির মধ্যস্থানে খালি অংশে, শ্রীপুর হাসপাতাল সড়কের সিএনজি স্ট্যান্ড এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির বিশাল এলাকা এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। বিভিন্ন সড়কের দুপাশে ও পরিত্যক্ত জায়গায় ময়লা-আবর্জনা, হোটেলের পঁচা-বাসী খাবারসহ দুর্গন্ধযুক্ত ময়লার স্তুপ। এ কারণে শহরের সুস্থ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। সর্বত্র পঁচা দুর্গন্ধের চিত্র। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা আবর্জনা নিয়ে এসে উপরোল্লেখিত স্থানে ফেলে চলে যায় পৌরসভার কর্মীরা।

bty

পৌরবাসীর অভিযোগ, ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য পরিকল্পিত কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে। পরিকল্পিত বর্জ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা না হলে শহর যেমন অপরিচ্ছন্ন থাকবে, তেমনি মানুষও সংক্রমিত হবে নানা রোগশোকে।

গত সোমবার ১৪ই জুন দুপুরে সরেজমিনে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা আবর্জনা ফেলে যাওয়ার পর সেগুলোতে টোকাইদের নাড়াচাড়া ও কুকুরের খাবার খোঁজায় দুর্গন্ধ আরো চরম আকার নিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের নাক ঢেকে শ্বাস বন্ধ করে যাতায়াত করতে হয়। শ্রীপুর পৌর এলাকার পরিবেশ দূষণের বড় কারণ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা।

bty

স্থানীয় সংবাদকর্মী এস এম জহিরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ময়লার ছবিসহ স্ট্যাটাস দিয়ে সমস্যা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, শ্রীপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মাওনা চৌরাস্তা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এভাবেই ময়লার স্তুপ জমে আছে বেশ কয়েকদিন যাবৎ! পৌর এলাকার এরকম হালচাল প্রশংসার দাবি রাখে না! আশা করি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শ্রীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা এবং সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মো. জামাল উদ্দিন বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বাসাবাড়ির ময়লা রাতের অন্ধকারে সড়কের পাশে ফেলে যায়। এর আগে লবলং নদে ময়লা ফেলার ঘটনায় মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সাথে দ্বন্দ্ব হয়েছে। এসবের প্রতিবাদে মানববন্ধনও হয়েছে এলাকায়। ময়লা-আবর্জনা এখন শ্রীপুর পৌরবাসীর বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এদিকে শ্রীপুর উপজেলার নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনেও সুষ্ঠু বর্জ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে অনেকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়েছে, শুধু আশ্বাস দেয় বাস্তবায়ন করে না। এতে করে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী।

পৌর মেয়র আনিছুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত শ্রীপুর পৌরসভা আমার প্রচেষ্টায়ই প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। ময়লার সমস্যা নিরসনের জন্য দুইটি জায়গা নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলার কাজ চলছে, শেষ হলে শীঘ্রই এ সমস্যা থেকে পৌরবাসী মুক্তি পাবেন।

সংবাদ সারাদিন