|| সারাবেলা প্রতিনিধি, চাঁদপুর ||
‘প্লাটফর্মে ঘুমাই, আমাগো রে, সরকার যদি একটা বাড়ি দিত! এটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারতাম। রাতে ঘুমাইতে গেলে কত কষ্ট হয়। মশা কামড়য়। বৃষ্টি আসে। শীতে কুয়াশায় কত ঠান্ডা লাগে। আমার মার আর ছোট বোনডার কত কষ্ট হয়।’-এভাবেই নিজের মনের ভেতর জমে থাকা দুঃখের কথাগুলো বললেন ১২ বছরের ফারজানা। মানুষের কাছে থেকে ভিক্ষা করে টাকা তুলে সংসার চালান। দুটো ভাত মুখে দেন তিন বোন দুই ভাই।
ফারজানার পরিবারের বাস চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪ নম্বর শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহতলী রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে। গত এক বছর ধরে এখানেই তাদের ঠিকানা।
ফারজানার মা মুন্নী বেগম বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে চাঁদপুরের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে থাকি। পোলাপান নিয়ে কত কষ্ট হয়। কাউ রে কইতে পারি না। ওর বাবা কোথায় চলে গেছে কোন খোঁজ খবর নেয় নাহ। আমার মেয়েরা ভিক্ষা করে অনে আমিসহ খাই। কত মতে বেঁচে আছি।
কেউ বলে মানবতার মৃত্যু হয়েছে বহু আগে। কেউ বলে মানবতা বন্দী হয়ে আছে অন্ধকার কুঠুরিতে। আবার কেউ কেউ মানবতার সন্ধান করে জাদুঘরে। মানবতা কি আদোও বেঁচে আছে? এসবের উত্তরতো ফারজানাদের মতো মানুষের কাছে।
ফারজানার পরিবারের মত গৃহহীন কত অসহায় মানুষ বসবাস করে রেলওয়ে স্টেশনে। যার নেই কোন হিসাবে। আর তাদের খোঁজ নেওয়া মত কেউ নেই। তাদের নেই কোন বলার মত ঠিকানা। তারপরে ও বেঁচে থাকে শুধু সংগ্রাম করে।
ফারজানা জন্মের পর কখনো কোন ঘরে ঘুমাতে পারেনি। তবে এখনো ফারজানা স্বপ্ন দেখে। হয় তো কোন একদিন সরকার ফারজানাদের দিকে নজর দেবে। এবং ছোট একটি ঘর দেবে। সেদিন ফারাজানার পরিচয় দেওয়া মত এটি ঠিকানা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। চাঁদপুরে যাতে কোন গৃহহীন পারিবার না থাকে। তবে আমাদের খাস জমির কিছুটা সংকট রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো ফারজানা পাশে দাঁড়াতে।
শাহতলী ইস্টিশনের দোকানদার এলাহি বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার যে কর্মসূচি নিয়েছেন, সেখান থেকে একটা ঘর যাতে ফারজানাকে উপহার দেওয়া হয়।