প্রশাসনে মাসোহারা দিয়ে কক্সবাজারে চলছে অবৈধ ভারী যানবাহন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইটভাটার মালিক বলেন, অবৈধ ডাম্পার-ট্রলি-ট্রাক্টর ও ইটভাটা চালাতে সমিতির মাধ্যমে পুলিশ-উপজেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি সংস্থায় মাসোহারা দিতে হয়।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার ||

প্রশাসনের সঙ্গে মাসোহারা চুক্তিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কে চলছে প্রায় দু’হাজার ডাম্পারসহ বিভিন্ন অবৈধ ভারী যানবাহন।চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ স্থানীয় সড়কগুলো ইটভাটার সহস্রাধিক মাটিবাহী ডাম্পার-ট্রলি-ট্রাক্টরের দখলে চলে গেছে। পথচারীরা সড়কে বের হলেই ইটভাটার পড়ে থাকা মাটির ধুলাবালির শিকার হচ্ছে। চোখের সামনে অবৈধ এসব যানের অবাধ চলাচল বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ফলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জেলার সর্বত্র।

জানা গেছে, জেলায় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। ভাটাগুলোর ইট ও মাটি বহন করতে প্রায় সহস্রাধিক ডাম্পার-ট্রলি-ট্রাক্টর আছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব ডাম্পার-ট্রলি-ট্রাক্টারগুলো প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচল করছে। প্রতিনিয়ত ডাম্পারগুলো মাত্রারিক্ত মাটি বহন করায় রাস্তায় মাটি পরে এবরো থেবেড়ো হচ্ছে রাস্তা। ধুলায় পথচলা দায় হয়ে পড়েছে। শুধু ডাম্পার-ট্রলি-ট্রাক্টর নয়, পুলিশ-প্রশাসনকে মাসিক চুক্তি করে নসিমন-করিমনগুলোও চলাচল করছে এসব সড়ক মহাসড়কে।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, চাষাবাদের জন্য আমদানী করা ট্রাক্টর ট্রলি রুপান্তরিত করা হচ্ছে ভারী যানবাহনে। আবাদি জমি ছেড়ে এসব যান দাবড়ে বেড়াচ্ছে পৌরশহরসহ উপজেলার গ্রামীন জনপদে কিংবা বাজার কেন্দ্রিক সড়কগুলোতে। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা না থাকায় অদক্ষ কিশোর চালকরাই চালাচ্ছে এসব ভারী যানবাহন। প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। জেলায় প্রতিদিন ১ হাজারেরও বেশী ডাম্পার এবং ট্রলি বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে অবাধে চলাচল করছে।

রামু কাউয়াখোপ এলাকার ব্যবসায়ী আবুল কালাম ও জসিম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা কাউয়ারখোপে ঘর-বাড়ি ঘেষে একই স্থানে চার পাঁচটি ইটভাটা চালাচ্ছে। এই ভাটাগুলোতে প্রায় ৯০-১০০টি মাটিবাহী অবৈধ ডাম্পার-ট্রাক্টর দেদার চলছে। ডাম্পার এবং ট্রাক্টরগুলো বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি বোঝাই করে যাতায়াত করছে। আর অতিরিক্ত মাটিগুলো সড়কে পড়ছে। শুধু ধুলার কারণে দোকানদারি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুলিশ-প্রশাসনে একাধিকবার অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না।

পথচারী শাকিল বলেন, অবৈধ যানবাহন ও ধুলাবালির কারণে রাস্তায় বের হতে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। সড়কে কোনো গাড়ি গেলেই ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইটভাটার মালিক বলেন, অবৈধ ডাম্পার-ট্রলি-ট্রাক্টর ও ইটভাটা চালাতে সমিতির মাধ্যমে পুলিশ-উপজেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি সংস্থায় মাসোহারা দিতে হয়। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অভিযান রোধে আমরা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে থাকি। কোনো সময় ভাটার মালিকরা টাকা দিতে দেরি করলে প্রশাসনিক অভিযান শুরু করে। ভাটার ডাম্পার-ট্রলি-ট্রাক্টর আটক করে রাখে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রকিবুর রেজা এ প্রসঙ্গে বলেন, অবৈধ ট্রাক্টর ও যানবাহন ধরতে ইতিমধ্যে আমরা অভিযান শুরু করেছি। তিনি আরোও বলেন, নতুন এসেছি বলে সবকিছু বুঝে উঠতে একটু সময় লাগছে। কয়েক দিনের মধ্যে মাটিবাহী ট্রাক্টর ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

 

সংবাদ সারাদিন