তারাগঞ্জে টিসিবিপণ্য বিক্রি নিয়ে চলছে নয়ছয়

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় টিসিবি’র পণ্য বিক্রির জন্য ৮ জন ডিলার রয়েছে। এই ডিলারদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই কালো বাজারে পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের মনিটরিং না থাকায় ডিলাররা যেনো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রংপুর ||

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় টিসিবি’র পণ্য বিক্রির জন্য ৮ জন ডিলার রয়েছে। এই ডিলারদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই কালো বাজারে পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের মনিটরিং না থাকায় ডিলাররা যেনো আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্র মতে, উপজেলার ৫ ইউনিয়নে টিসিবির ৮ জন ডিলার রয়েছে। রমজান শুরুর একদিন আগে থেকে অর্থাৎ ১৩ই এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলার নতুন চৌপথী বাসস্ট্যান্ডে এমএইচ এন্টারপ্রাইজ এবং বাজার রোডে আলহাজ আব্দুল হাই নামের দুই প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া অন্য পরিবেশকদের কোথাও পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়নি। তারা গোডাউনে রেখে মালামাল বিক্রি কালোবাজারে বিক্রি করছে বলে স্থানীয় ভোক্তারা জানিয়েছেন।

ব্যবসায়ী সুজন (৩২) বলেন, রমজানের এক দিন আগে তারাগঞ্জ মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে টিসিবির পন্য বিক্রি করতে দেখি। সেদিন সেখান থেকে আমি তেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও সোয়াবিন তেল কিনি। তারপর ১৫ দিন থেকে টিসিবির মালামাল বিক্রি করতে দেখিনি। প্রায় এক সপ্তাহ আগে আবারও পণ্য কিনতে যাই কিন্ত টিসিবির ট্রাক বা গোডাউন খুঁজে পাইনি । বাধ্য হয়ে বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য সংগ্রহ করেছি।

তিনি আরও বলেন, টিসিবির মাল ৫০ টাকা কেজিতে চিনি, ৫৫ টাকা কেজি দরে মুশুর ডাল কিনেছিলাম। বাজার থেকে সেই চিনিই ৭০, মশুর ডাল ৯০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৩৫ টাকা কেজি দরে কিনে এনেছি।

তারাগঞ্জ বাজারের মিলন বলেন, গত ১৫ দিন আগে দেখেছি, কিন্তু গত সপ্তাহে ট্রাকে করে টিসিবির মালামাল বিক্রি করতে দেখিনি। দোকান বা গোডাউন ঘরও খুঁজে পাইনি। এখন ডিলার কোথায় টিসিবির মালামাল বিক্রি করছে তা খুঁজে পাচ্ছি না।

উপজেলা নতুন চৌপথী বাসস্ট্যান্ডে ট্রাক সেলের মাধ্যমে এমএইচ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আমার জানা মতে এবারের রমজানে বরাদ্দ পাওয়া টিসিবির মালামাল কমবেশি সব ডিলাররাই তুলেছে। যারা ট্রাকে বিক্রি করে তাদের মাস্টার রোল জমা দিতে হয়। নিয়ম আছে, বরাদ্দকৃত মালামাল উত্তোলন না করলে এবং তিন বছর অন্তর নবায়ন না করলে নিবন্ধন বাতিল হয়।

তিনি আরো বলেন, এখন ডিপো থেকে বেশি পরিমাণ মালামাল উত্তোলন করতে পারলে লাভ অনেক বেশি, তাই বেশি করে টিসিবির মালামাল উত্তোলন করার চেষ্টায় আছি।

তারাগঞ্জ বাজারের টিসিবির ডিলার আলহাজ্ব আব্দুল হাই বলেন, গত ১৩ই এপ্রিল মঙ্গলবার টিসিবির পণ্য বিক্রি করেছি। টিসিবি থেকে যথাযথ পরিমাণে মালামাল সরবরাহ না করায় ক্রেতাদের কাছে সঠিকভাবে পণ্য পৌঁছাতে পারছি না। ট্রাক সেলে মাল বিক্রি করার কথা থাকলেও এখন আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমার গোডাউন থেকে মাল বিক্রি করতে হচ্ছে।

উপজেলার টিসিবির পন্য মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা ফখরুল ইসলাম, ও আব্দুল্লা আল মামুনসহ সংশ্লিষ্ট ৮জন কর্মকর্তা জানান, আমরা মালামাল দেওয়ার সময় থাকিনা। ডিলাররা কখন টিসিবির মাল নেয় সেটাও আমাদেরকে জানায় না। মাসশেষে এসে মাল বিক্রির প্রত্যয়নপত্র নিয়ে যায়। দায়িত্ব দেওয়া হলেও আমাদেরকে মূল্যায়ন ও কোন প্রকার হিসাব দেন ডিলাররা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, টিসিবির মনিটরিংয়ের জন্য আমার উপজেলার ৮জন সহকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের উপস্থিতিতে ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির মাল বিক্রি করবার কথা।

রংপুর টিসিবির উপ-উর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মুঠোফোনে বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন টিসিবির মালামাল বিক্রির বিষয়গুলো তদারকি করছেন। প্রত্যেক ডিলারের বরাদ্দের পরিমাণ চিঠি দিয়ে প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়। এছাড়াও সব তথ্য টিসিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। পণ্য তোলার পর কালোবাজারে বিক্রির তথ্য প্রমাণিত হলে জামানতসহ ডিলারসিপ বাতিল করা হবে।

সংবাদ সারাদিন