ঝুঁকিতে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের শতবর্ষী সব গাছ

মহাসড়কের পাশের মাটি কেটে সাড়ে তিন ফুট গভীর করা হয়। এতে পাশের শতবর্ষী গাছের শিকড় কাটা পড়ে। তাতে করে গাছগুলো একটু ঝড়ে উপড়ে পড়ে ফসলী জমিসহ সড়কের পাশের ঘর বাড়ির উপর।

অপরিকল্পিত সড়ক সম্প্রসারন

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, বেনাপোল ||

ঐতিহাসিক যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দুইপাশে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই হাজারের বেশি শতবর্ষী গাছ। এসব গাছ কেটে যশোর-বেনাপোল সড়কের পরিসর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এ সিদ্ধান্তের পর এসব গাছ রক্ষায় সরব হয়ে ওঠে দেশের সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। শুরু হয় সড়কের দুই পাশে গাছ রেখে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। এজন্য মহাসড়কের পাশের মাটি কেটে সাড়ে তিন ফুট গভীর করা হয়। এতে পাশের শতবর্ষী গাছের শিকড় কাটা পড়ে। তাতে করে গাছগুলো একটু ঝড়ে উপড়ে পড়ে ফসলী জমিসহ সড়কের পাশের ঘর বাড়ির উপর। 

এমন পরিস্থিতিতে মহাসড়কের পাশে বসবাসকারী মানুষদের মধ্য তৈরি হয়েছে প্রতিমুহুর্তের আতঙ্ক। আবারও ঝড়বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে পড়তে পারে। এতে গাছের নিচে চাপা পড়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি হতে পারে। তাই উপড়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা এবং যখন তখন ভেঙে পড়তে পারে এমন গাছগুলো সরিয়ে ফেলার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়কের ধারে থাকা মানুষেরা বলেন, বড় ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলে গাছ আমাদের বাড়ির ওপরে পড়বে। যে কারণে পরিবার নিয়ে অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো সরিয়ে নেয়ার দাবি জানান তারা।

গাছগুলোর বেশী ভাগেরই নেই কোন পাতা, শুকিয়ে কঙ্কালসার। সমস্ত শাখা প্রশাখা গুলো আঁকড়ে ধরে আছে আগাছারা। প্রতিনিয়ত ভেঙে পড়ছে এসব গাছের শুকনো ডালপালা। ঘটছে দূর্ঘটনা। সব সময় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এসমস্ত জরাজীর্ণ গাছের ডাল যে কোন সময় মাথায় ভেঙে পড়তে পারে জেনেও জীবনের মায়া ভুলে সড়কে ছুটছে মানুষ।

এই পথ ধরেই চলাচল দেশের সবচে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে। এ বন্দর থেকে প্রতিদিন শতশত পণ্যবাহি ট্রাক চলাচল করে এই মহাসড়ক ধরে। আন্তর্জাতিক চেকপোস্টও বেনাপোলে অবস্থিত।

প্রসঙ্গত যশোরের জমিদার কালী পোদ্দার তার মাকে সোজা পথ দিয়ে গঙ্গাস্নানে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ৫৮ হাজার কড়ি ব্যয়ে ১৮৪২ সালে যশোর শহরের বকচর থেকে ভারতের নদিয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। আর ৮০ কিলোমিটারের ওই রাস্তার ছায়ার জন্য দুই ধারে বিদেশ থেকে এনে অতিবর্ধনশীল রেইনট্রি গাছের চারা লাগিয়েছিলেন কালী পোদ্দার। সেই গাছগুলো যশোর-বেনাপোল সড়কে এখনো ছায়া দেয়ার পাশাপাশি অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু গাছগুলো আজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই আজ মানুষের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো সরিয়ে নেয়া দরকার বলে মনে করেন সড়কে চলাচলরত সকল শ্রেনি পেশার মানুষ।

সংবাদ সারাদিন