জরাজীর্ণ নূহ্য এক ডাকঘরের আত্মকাহিনী

দুর থেকে দেখে মনে হবে এটি একটি পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ী। অজানা মানুষের চেনার উপায় নেই এটি ডাক অফিস। এমনি পুরনো ও জরার্জীণ ১তলা ভবনেই চলে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা ডাক অফিসের কার্যক্রম।

|| খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও) থেকে ||

সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা, প্রধান ফটকে নড়বড়ে গেট, অফিসের সাইনবোর্ডে মিশে গেছে “ডাক অফিস লেখা”, ভবনের ছাদ ভেদ করে অফিসের ভেতরে বৃষ্টির পানি পড়ে চুয়ে চুয়ে, নষ্ট হয় প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র।

দুর থেকে দেখে মনে হবে এটি একটি পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ী। অজানা মানুষের চেনার উপায় নেই এটি ডাক অফিস। এমনি পুরনো ও জরার্জীণ ১তলা ভবনেই চলে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা ডাক অফিসের কার্যক্রম।

উপজেলা পরিষদের ঠিক বিপরীত দিকে এশিয়ান হাইওয়ে ঘেঁষা উপজেলা ডাকঘর অফিসটি। মহাসড়ক ঘেষেঁ রয়েছে সীমানা প্রাচীর তাও তা ভেঙ্গে গিয়ে তছনছ। তার সামনে আবার গজে উঠেছে জঙ্গল আর ঝোপঝাড়, প্রধান ফটকের গেট নড়বড়ে ,প্রধান ফটকের এবং ডাক ভবনের মাঝের ডান সাইডের ফাঁকা স্থানটিতে পড়ে রয়েছে অনেক পঁচা ময়লা আর্বজনা। অভিযোগ রয়েছে, পাশের মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী এসব ময়লা আর্বজনা এখানে ফেলে স্তুপ করছেন। ঐ জায়গাটি আবার অঘোষিত প্রসাব খানাও বটে। প্রতিবেদকের সামনেই অফিসসময়ে প্রধান ফটক দিয়ে এসে অফিসের ডান সাইডের ঐ জায়গায় খোলামেলা ভাবেই হর হামেশাই প্রসাব সেরে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

ভবনের ভেতরের কক্ষগুলোর অবস্থা আরো নাজেহাল। কক্ষের মেঝের পলেস্তারা উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের, দেওয়ালের অবস্থা আরো নাজুক, ছাদের বিভিন্ন স্থানে সিমেন্টের ঢালাই উঠে রড বেরিয়ে পড়েছে। কক্ষগুলোর দরজা জানালা অনেক পুরনো হওয়ায় নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের ওয়্যারিং একেবারে নাজুক। যা বিপদ ডেকে আনতে পারে যে কোন সময়। বৃষ্টি হলেই ভবনের ছাদ চুয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে ২টি কক্ষেই। এতে প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র সংরক্ষণে চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ডাক কর্মকর্তাদেরকে।

এ নিয়ে রাণীশংকৈল ডিগ্রী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে অফিসটির এমন নাজেহাল অবস্থা দেখছি। সময়ের ব্যবধানে ডিজিটাল এ যুগে অনেক দপ্তরের অবকাঠামো পরিবর্তন হলেও সরকারী এই গুরত্বপূর্ণ অফিসটির এখনো কোন সুরাহা হলো না। এটি দুঃখজনক।

উপজেলা পোষ্ট মাষ্টার গোলাম মোস্তফা জানান, ১৯৮৪ সালে এক বিঘা জমি নিয়ে নির্মাণ করা হয় উপজেলার এই ডাকঘর। সেই থেকে অফিসটি একবারো সংস্কার হয়নি। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করলেও এখনো নতুন করে ভবন নির্মাণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই এখানেই অফিস করতে হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, বিদ্যুতের ওয়্যারিংয়ের তারগুলো যখন তখন ছুটে পড়ে যায়। বিদ্যুতের পাখাগুলো ছুটে পড়ে যায়, স্থানীয় মিস্ত্রি দিয়ে কোন রকম লাগিয়ে কাজ করছি। তাছাড়াও ভবনের ষ্টোর রুম ২টির ছাদের বিভিন্ন অংশ চুয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। এতে প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র সংরক্ষণে চরম সমস্যা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে জীবন শংকায় অফিস করছি। জানি না কখন কি দূর্ঘটনা ঘটে। সরকারী চাকরি করি তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে অফিস করতে হচ্ছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আযম মুন্না এ প্রসঙ্গে বলেন, জরার্জীণ এই ডাক ভবনটি নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

সংবাদ সারাদিন