চলছে বালু-পাথর তোলা ঠেকানো যাচ্ছে না যাদুকাটা নদীর ধ্বংস

প্রশাসনিক তৎপরতার কারণে মাঝে মধ্যে অবৈধ কোয়ারী ও যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালি-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে। তবে অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসায়ীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে।

পুলিশী অভিযানে ৫ লাখ টাকার পাথরসহ গ্রেফতার ১

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ ||

সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী যাদুকাটা। এই নদীতে রয়েছে মূল্যবান খনজি সম্পদ কয়লা, বালি ও পাথর। এসব খনিজ সম্পদ থেকে প্রতি বছর রাষ্ট্রের পাওয়ার কথা কোটি টাকার রাজস্ব। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিবছর অবৈধ ভাবে কয়লা, বালি ও পাথর বিক্রি করে আসছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

সম্প্রতি নদীর তীর কেটে বালি ও পাথর উত্তোলনের ছবি তোলায় একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় সাংবাদিককে গাছে বেঁধে নির্যাতন করে প্রভাবশালী এসব নদীখেকোরা। এঘটনায় মামলা হাওয়ার পর থেকেই কিছুটা হলেও বেড়েছে প্রশাসনিক দৌঁড়ঝাপ। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না নদী থেকে কয়লা, বালি ও পাথর উত্তোলন ও বিক্রিবানিজ্য।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার ২০শে মার্চ সন্ধ্যায় চিহ্নিত অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসায়ী কিরন রায়কে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এরআগে শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে নদীতীর কেটে ও অবৈধ কোয়ারী থেকে তোলা ৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজার দাম প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। অভিযানের সময় কিরন রায়কে গ্রেফতার করা গেলেও তার অন্য সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

গ্রেফতার কিরন রায় জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গড়কাটি গ্রামের মৃত বরদা রায়ের ছেলে। তার নেতৃত্বে অবৈধভাবে নদীর তীর কেটে ও পাথর কোয়ারী থেকে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বালি ও পাথর বিক্রি করা হয়। তার সহযোগীরা এখনও বহাল তবিয়তে ৩০ থেকে ৪০টি অবৈধ কোয়ারী পরিচালনা করছে।

অপরদিকে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের সামনেই চলছে অবৈধ কয়লা ও পাথর ব্যবসায়ীদের জমজমাট বাণিজ্য। পুলিশের সোর্স পরিচয়ধারী আমিনুল মিয়া, নাজিম মিয়া, নবীকুল মিয়া, নুরু মিয়াগং সিন্ডিকেডের মাধ্যমে সীমান্তের নো-ম্যন্সল্যান্ডে অবস্থিত ১২০৩ নম্বর পিলার অতিক্রম করে যাদুকাটা নদী দিয়ে ভারতের সীমানা থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে হাজার হাজার টন কয়লা ও পাথর ট্রলি বোঝাই করে আনছে।

লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে কয়লা ও পাথর পাচার করলেও এব্যাপারে আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। সম্প্রতি যাদুকাটা নদী দিয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচার করা নিয়ে চোরাচালানী ও বিজিবির মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়। এঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রাম্য সালিশ ও থানায় মামলা হয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি যাদুকাটা নদীর অবৈধ ব্যবসা।

এদিকে দুর্বৃত্ত এসব ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে প্রাণ হারাচ্ছে যাদুকাটা নদী। নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে ঘাগটিয়া, গরকাটি, আদর্শগ্রাম, মানিগাঁও, বিন্নাকুলী, মোদেরগাঁও এলাকার হাজারের বেশী ঘরবাড়ি ও শত একর ফসলী জমি।

এব্যাপারে নির্যাতিত সাংবাদিক দৈনিক সংবাদ এর তাহিরপুর প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রেসক্লাবে সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন রাফি বলেন- প্রশাসনিক তৎপরতার কারণে মাঝে মধ্যে অবৈধ কোয়ারী ও যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালি-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে। তবে অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসায়ীরা এখনও বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। তারা যাদুকাটা নদীর তীরে অবৈধ ভাবে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বালি ও পাথার মজুত করে রেখেছে। অবৈধ বালি ও পাথর জব্দ করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরকে শিগগিরিই আইনের আওতায় নেওয়া জন্য প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন- যাদুকাটা নদীর তীর কেটে ও কোয়ারী থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোনের অপরাধে কিরণ রায়কে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বেআইনি ভাবে যাদুকাটা নদীতে বালু ও পাথর উত্তোলন কাজে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  

সংবাদ সারাদিন